রাফায় ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারালেন ৩২ জন ফিলিস্তিনি: বিতরণ কেন্দ্র পরিণত ‘মৃত্যুফাঁদে’

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ৬:৪৩ অপরাহ্ণ
রাফায় ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারালেন ৩২ জন ফিলিস্তিনি: বিতরণ কেন্দ্র পরিণত ‘মৃত্যুফাঁদে’

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় আবারও ঘটে গেল এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। রোববার সকালে ত্রাণ সংগ্রহ করতে আসা অসহায় ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে অন্তত ৩২ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। ঘটনার ভয়াবহতা দেখে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ত্রাণ কেন্দ্রগুলো এখন আর সাহায্যের আশ্রয় নয়, বরং রক্তাক্ত মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করছে, বিতর্কিত মানবিক সংস্থা ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ)-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলো ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, রাফার ঘটনায় ইসরায়েলি ট্যাংক থেকে সরাসরি গুলি চালানো হয় ত্রাণ নিতে আসা হাজার হাজার মানুষের ওপর। একই দিন নেটসারিম করিডোরের দক্ষিণেও একটি বিতরণ কেন্দ্রে গুলিতে আরও একজন নিহত হন।

চোখের সামনে এই হামলার সাক্ষী রাফার বাসিন্দা ইব্রাহিম আবু সাউদ বলেন, “প্রায় ৩০০ মিটার দূরে থাকা জনতার দিকে গুলি ছোড়া হয়। আমি একজন যুবককে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যেতে দেখি। আমরা তাকে আর বাঁচাতে পারিনি।”

এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বিতর্কিত সংস্থা জিএইচএফ কার্যক্রম শুরুর আগেই এর নির্বাহী পরিচালক, সাবেক মার্কিন সেনা জ্যাক উডস পদত্যাগ করেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “এই পরিকল্পনা মানবতা, নিরপেক্ষতা, পক্ষপাতহীনতা ও স্বাধীনতার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।” জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ইতোমধ্যেই জিএইচএফ-এর সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাদের মতে, সংস্থাটি একটি মানবিক উদ্যোগ নয় বরং ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ার।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, “মানুষ এখন সন্তানদের একবেলার খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। এটি কোনোভাবেই মানবিক সহায়তা হতে পারে না, বরং এটি এক ধরনের শাস্তিমূলক অপারেশন।”

আল জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খোদারি বলেন, “ফিলিস্তিনিরা জানেন যে এই বিতরণ কেন্দ্রগুলো নিরাপদ নয়, তবুও তারা বাধ্য হচ্ছেন সেখানে যেতে। পরিবারপ্রতি দেওয়া হচ্ছে মাত্র এক কেজি আটা, দুই প্যাকেট পাস্তা আর কয়েকটি ফাভা বিনের টিন—যা পুষ্টিকর তো নয়ই, বরং অপমানজনক।”

তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা কোনো বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে গুলি চালায়নি। বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, সেনারা কোনো বেসামরিককে লক্ষ্য করেনি। সাম্প্রতিক কিছু তথ্য ভুল ও বিভ্রান্তিকর।”

এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মানবিক সহায়তা কীভাবে রক্ষার জায়গা থেকে প্রাণঘাতী ফাঁদে পরিণত হচ্ছে, সেই প্রশ্ন এখন জোরালোভাবে সামনে এসেছে। বিশ্ব এখন অপেক্ষায়—এই নিষ্ঠুরতা থামবে কখন।