কোরবানির প্রস্তুতিতে ব্যস্ত অভয়নগরের কামারশালাগুলো

ঈদুল আজহা সামনে রেখে অভয়নগর উপজেলার কামারশালাগুলো এখন যেন নিঃশ্বাস ফেলারও সময় পাচ্ছে না। কয়লার চুলায় টগবগ করে ফুটছে আগুন, আর ছড়াচ্ছে হাতুড়ির টুংটাং শব্দ। কোরবানির জন্য ছুরি, বটি, দা, চাপাতি তৈরি আর পুরোনো অস্ত্রে শান দেওয়ার কাজ নিয়ে দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন কামারশিল্পীরা।
বুধবার সকালে তালতলা, বেঙ্গল গেট ও প্রেমবাগ এলাকার বিভিন্ন কামারশালায় গিয়ে দেখা যায়, কামাররা জ্বলন্ত ছাঁইয়ের ভেতর থেকে লাল গরম লোহার টুকরো তুলে ঝালিয়ে নিচ্ছেন। কেউ ধার দিচ্ছেন পুরোনো দা-বটিতে, কেউ আবার কোরবানির নতুন সরঞ্জাম তৈরি করছেন। প্রতিটি হাতে তখন কাজের ব্যস্ততা আর চোখেমুখে ঈদের আনন্দের ছায়া।
তালতলার কামার সোহাগ কর্মকার বলেন, কয়লা সংকট ও লোহা-ইস্পাতের দাম বাড়লেও ঈদকে ঘিরে কাজের চাপ অনেক বেশি। “শানের কাজ বেশি হচ্ছে এখন, দিন-রাত কাজ করেও কুলিয়ে উঠতে পারছি না,” জানান তিনি।
বেঙ্গল গেট এলাকার সুমন কর্মকার বলেন, এখন আর নতুন কেউ এই পেশায় আসতে চায় না। দক্ষ কারিগরের অভাবে ঘাট থেকে লেবার এনে কাজ চালাতে হচ্ছে। অনেকেই এখন চায়না স্টিলের সরঞ্জাম কিনছেন, কিন্তু তাঁরা দেশি লোহায় মানসম্মত দা-বটি তৈরি করছেন বলেও জানান।
বর্তমানে কামাররা ছুরি বিক্রি করছেন ১০০ থেকে ৩০০ টাকায়, বটি ৩০০ থেকে ৫০০, দা ৫০০ থেকে ৬০০ এবং চাপাতি ৯০০ থেকে ১২০০ টাকায়। তবে ক্রেতারা বলছেন, আগের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বেশি।
কামাররা মনে করেন, সরকার যদি এই শিল্পের প্রতি নজর দেয় এবং পৃষ্ঠপোষকতা করে, তবে একদিকে যেমন অভিজ্ঞ কারিগররা টিকে থাকতে পারবেন, অন্যদিকে প্রাচীন এই শিল্পও হারিয়ে যাবে না। কারণ এখন তাঁদের একসাথে লড়তে হচ্ছে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি আর অভিজ্ঞ কর্মীর অভাবের সঙ্গে।
চোখেমুখে ক্লান্তি থাকলেও কামারদের মুখে দেখা যাচ্ছে সন্তুষ্টির হাসি। কারণ, ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো তৈরি হয় তাঁদের হাতেই। তাঁরা যেন এই ঈদের প্রস্তুতির নেপথ্য নায়ক—যাঁদের নিঃশব্দ শ্রমে তৈরি হয় প্রতিটি ধারালো অস্ত্র, যেগুলোর মাধ্যমে পূর্ণতা পায় ত্যাগের মহিমা।
আপনার মতামত লিখুন