মণিপুরে ফের উত্তেজনা: আরামবাই তেংগল নেতার গ্রেপ্তারে রাজ্যজুড়ে সহিংসতা, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ জারি

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫, ৬:৪০ অপরাহ্ণ
মণিপুরে ফের উত্তেজনা: আরামবাই তেংগল নেতার গ্রেপ্তারে রাজ্যজুড়ে সহিংসতা, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ জারি

ভারতের মণিপুর রাজ্যে আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মেইতেই গোষ্ঠীর সংগঠন ‘আরামবাই তেংগল’-এর শীর্ষ নেতা এবং রাজ্য পুলিশের সাবেক হেড কনস্টেবল কানন সিংহকে সিবিআই গ্রেপ্তারের পর রাজ্যজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রবিবার থেকে ইম্ফল ইস্ট, ইম্ফল ওয়েস্ট, কাকচিং, থৌবাল ও বিষ্ণুপুর জেলায় মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুনরায় কারফিউ জারি করা হয়েছে বিভিন্ন জেলায়।

সিবিআই জানিয়েছে, ২০২৩ সালের জাতিগত সহিংসতার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কানন সিংহসহ আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করে গুয়াহাটি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র বিক্ষোভ। ইম্ফল ইস্টে কেন্দ্রীয় বাহিনীর একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়, ইয়াইরিপোকে একটি পুলিশ পোস্টে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিক্ষোভকারীরা সড়কে ব্যারিকেড গড়ে তোলে এবং টায়ার জ্বালিয়ে পুলিশের অগ্রগতি রুখে দেয়। পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। পিটিআই সূত্রে জানা যায়, অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন।

সংগঠন ‘আরামবাই তেংগল’ দশ দিনের রাজ্যব্যাপী হরতালের ডাক দিয়েছে। সংগঠনটির দাবি, তাদের সদস্যদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

এই সংকটময় পরিস্থিতিতে মণিপুরের রাজ্যপাল অজয় কুমার ভল্লা জরুরি বৈঠকে বসেন ২৫ জন বিধায়ক, রাজ্যসভার সদস্য ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আরামবাই তেংগল সম্প্রতি বন্যার সময় মানবিক সহায়তা দিয়েছে, তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে টার্গেট করা হচ্ছে না।” তবে কংগ্রেসের বিধায়ক ওক্ৰম সূর্যকুমার অভিযোগ করেন, “এভাবে হঠাৎ কাউকে গ্রেপ্তার করলে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়। স্বচ্ছ ব্যাখ্যা প্রয়োজন। এখন সবচেয়ে প্রয়োজন রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনা।”

এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সাসপেনশন অব অপারেশন (এসওও) চুক্তিভুক্ত কুকি-জো বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এক কুকি প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি আশা করছি। আমাদের লক্ষ্য স্থায়ী শান্তি।”

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের মে মাসে মেইতেই ও কুকি-জো সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এই সংকটের মধ্যেই ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং পদত্যাগ করেন এবং রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হয়।

উল্লেখযোগ্যভাবে, এত গুরুতর পরিস্থিতির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখনও মণিপুর সফর করেননি। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি তীব্র সমালোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।