মে মাসে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৬৫৮ জনের প্রাণহানি, আহত ১২১০—সড়ক নিরাপত্তায় অব্যাহত অব্যবস্থাপনা ও উদ্বেগজনক চিত্র

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ
মে মাসে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৬৫৮ জনের প্রাণহানি, আহত ১২১০—সড়ক নিরাপত্তায় অব্যাহত অব্যবস্থাপনা ও উদ্বেগজনক চিত্র

সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। বিদায়ী মে মাসে সারাদেশে ৫৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬১৪ জন এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১১৯৬ জন। রেল ও নৌপথ মিলিয়ে মে মাসে মোট ৬৫২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬৫৮ জন এবং আহত হয়েছেন ১২১০ জন। এসব তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল। সংস্থাটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ১২ জুন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সড়কে প্রাণহানির মূল কারণ হিসেবে বেপরোয়া গতি, শৃঙ্খলার অভাব এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনা সবচেয়ে বেশি দায়ী। মে মাসে সংগঠিত ৫৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬১৪ জন নিহত এবং ১১৯৬ জন আহত হন। রেলপথে ৪৮টি দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত ও ১৪ জন আহত হন, আর নৌপথে ৭টি দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাই সবচেয়ে বেশি ঘটেছে—২৩৩টি ঘটনায় ২৫৬ জন নিহত ও ২০১ জন আহত হন, যা মে মাসের মোট দুর্ঘটনার ৩৯.০২ শতাংশ এবং মোট প্রাণহানির ৪১.৬৯ শতাংশ। ঢাকা বিভাগে সর্বাধিক ১৩৯টি দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন নিহত হয়েছেন, বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ৩০টি দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত হন।

দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের মধ্যে আছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ সদস্য, ১৫৪ জন চালক, ১০৩ জন পথচারী, ৯২ জন শিক্ষার্থী, ৮৮ জন নারী, ৫৮ জন শিশু, ৫ জন শিক্ষক, ৩৭ জন সাংবাদিক, ২ জন চিকিৎসক, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ৭ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। নিহতদের মধ্যে ছিলেন পুলিশ, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ চালক, পথচারী, নারী, শিশু, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

এই সময়ে সংগঠিত ৯৪৫টি যানবাহনের মধ্যে ২৯.৪১ শতাংশ ছিল মোটরসাইকেল, ২২.৫৩ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ১২.৪৮ শতাংশ বাস, ১৪.১৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৬.৬৬ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং বাকিগুলো বিভিন্ন ধরণের যানবাহন। দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৪৯.০৭ শতাংশ দুর্ঘটনা হয়েছে গাড়ি চাপায়, ২৪.৯৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২০.১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া, এবং বাকি অংশ বিভিন্ন জটিল কারণ ও ট্রেন-যান সংঘর্ষের ফলে।

সংস্থার বিশ্লেষণে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশার অবাধ চলাচল, সড়কে পর্যাপ্ত রোড সাইন বা আলোর অভাব, টার্নিং চিহ্নের অনুপস্থিতি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য, উল্টোপথে চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, ফিটনেসবিহীন ও অদক্ষ চালকদের দ্বারা যানচালনা, অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও দীর্ঘসময় চালনা করা।

প্রতিবেদনে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশার আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ, মহাসড়কে রাতের জন্য আলোকসজ্জা, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস নিশ্চিত করা, ধীর ও দ্রুতগতির যান চলাচলের জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, রোড সাইন ও ফুটপাত স্থাপন, আধুনিক বাস নেটওয়ার্ক তৈরি, বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানসম্পন্ন সড়ক নির্মাণ ও নিয়মিত রোড সেফটি অডিট, এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন স্ক্র্যাপ করার উদ্যোগ।

এই প্রতিবেদনের তথ্যগুলো দেশের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা ও দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরেছে, যা অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি রাখে।