ফেনীতে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা

ফেনীতে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ঈদের ১০ দিন পার হলেও পাইকারদের দেখা মেলছে না, যার কারণে চামড়ার বাজারে ব্যাপক ধস নামে এবং এতে সাধারণ দুস্থ মানুষরা বঞ্চিত হচ্ছেন। মৌসুমী চামড়ার ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সরকার গতবারের মতো এবারও রাজধানীতে লবণযুক্ত চামড়ার সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করেছে রাজধানীতে ১৩৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১১৫০ টাকা। তবে বাস্তবে এই দামে চামড়া বিক্রি হচ্ছে না। বিশেষ করে ছাগলের চামড়ার চাহিদা অনেক কম, অনেকেই বিনামূল্যে ছাগলের চামড়া দান করেছেন। ছাগলের চামড়ার দাম মাত্র ১৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। পাঁচগাছিয়া বাজারে রাস্তার উপরেও ছাগড়া পড়ে থাকতে দেখা গেছে, কিন্তু ট্যানারি মালিকদের দেখা মেলছে না।
অন্যান্য বছরগুলোতে কোরবানিদাতারা অনেকেই চামড়া বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান করলেও এবার চামড়াগুলো পানির দরে বিক্রি করা হচ্ছে। গরুর চামড়া ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে সংগ্রহ করা হলেও বাজার সংকটের কারণে বিক্রি করতে সমস্যা হচ্ছে। ঈদের দিন ও পরেরদিন জেলার বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার ধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল চামড়া।
পাঁচগাছিয়া বাজারের শফিক এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুর রহমান বলেন, “এবার প্রায় চার হাজার চামড়া সংগ্রহ করেছি, এখনো বাজারের অবস্থা পরিষ্কার নয়। তবে আমরা আশা করি পরিস্থিতি ভালো হবে। তবে সিন্ডিকেট ব্যবসায় নষ্ট করতে পারে। আমরা চাই সিন্ডিকেট ভেঙে যাক। এই ব্যবসা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্প এবং সরকার আন্তরিক হলে তা টিকবে।”
অন্যদিকে নূরনবী ট্রেডার্সের মালিক নূরনবী মেম্বার জানান, “চামড়ার ব্যাপারে এখন কেউ তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। প্রায় ১০ হাজার চামড়া সংগ্রহ করেছি, কিন্তু লাভের বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত।”
কবির এন্টারপ্রাইজের মালিক কবির আহ্ম্মদ জানান, “১৫-১৬ বছর আগে চামড়া ব্যবসায় ট্যানারি মালিকদের উৎসাহ অনেক বেশি ছিল, যা এখন আর নেই। এবার আমরা ৩২০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত চামড়া সংগ্রহ করেছি। লবণ ও মজুরিসহ প্রতিটি চামড়ায় আরও প্রায় ২০০ টাকা খরচ হয়েছে।”
ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, “চামড়ার বিষয়টি জাতীয় ইস্যু এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। মন্ত্রণালয়েও ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। জেলা প্রশাসনও চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণ সরবরাহ করেছে, যার ফলে চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই। আশা করছি পরিস্থিতি শীঘ্রই উন্নত হবে।”
ফেনীতে চলমান এই সংকট কোরবানির পশুর চামড়া ব্যবসায় বাণিজ্যিক ও সামাজিক প্রভাব ফেলছে, যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপরতা ও সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সমাধানের প্রয়োজন।
আপনার মতামত লিখুন