ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে আতঙ্কে প্রবাসী ভারতীয়রা, বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত অনেকের

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫, ৩:৩৬ অপরাহ্ণ
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে আতঙ্কে প্রবাসী ভারতীয়রা, বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত অনেকের

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত দিন দিন তীব্র আকার ধারণ করছে। এতে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে পড়েছেন দেশটিতে অবস্থানরত হাজার হাজার ভারতীয় প্রবাসী। কেউ কেয়ার গিভার, কেউ নির্মাণ শ্রমিক কিংবা প্রযুক্তি খাতে কর্মরত—সবাই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অনেকেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে যাবেন।

তেল আবিবে ১৩ বছর ধরে কেয়ার গিভার হিসেবে কর্মরত কর্ণাটকের রাঘবেন্দ্র নাইক বলেন, “আমার ছয় বছরের মেয়েটাকে বহুদিন দেখিনি। ভেবেছিলাম সামনের মাসে দেশে যাব। কিন্তু ইরানের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হওয়ায় সব অনিশ্চিত হয়ে গেছে। রাতে ঘুমাতে পারি না, সাইরেন বাজলেই ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে দৌড়াতে হয়। এখন তো মনে হয়, আদৌ ফিরতে পারব কি না।”

তাঁর মতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তেলেঙ্গানার সোমা রভিও। প্রায় ২০ বছর ধরে ইসরায়েলে আছেন তিনি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে মেয়ের ভারতে ফেরার কথা থাকলেও সংঘাত শুরু হওয়ায় পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। বলেন, “কবে বাড়ি যেতে পারব, জানি না। শুধু নিজের নয়, আশপাশের সবার জীবন নিয়ে এখন চিন্তা।”

ইসরায়েলে বর্তমানে আনুমানিক ২০ হাজারের বেশি ভারতীয় কর্মী রয়েছেন। সরকারি তথ্যে ৬ হাজার ৬৯৪ জন ভারতীয় কর্মী ইসরায়েলে বৈধভাবে কাজ করছেন এবং আরও বহু কর্মী নির্মাণ ও সেবাখাতে অনানুষ্ঠানিকভাবে নিয়োজিত আছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রবাসীদের নিরাপত্তার জন্য নির্দেশিকা দিয়েছে। স্থলপথে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে সেখান থেকে বিশেষ বিমানে দেশে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলে বসবাসরত ভারতীয় ইহুদিদের মাঝেও উদ্বেগ ছড়িয়েছে। মুম্বাই থেকে ১৯৬৩ সালে যাওয়া অশীতিপর নিসিন মোসেরি বলেন, “আমার দেখাশোনা কেয়ার গিভার করেন। সাইরেন বাজলে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে যাওয়ার জন্যও তার ওপর নির্ভর করতে হয়। আমার ছেলেরা যুক্তরাষ্ট্রে, আমি এখানে একা। এখন প্রতিটি মুহূর্ত আতঙ্কে কাটে।”

এ পরিস্থিতিতে কেউ কেউ ইতোমধ্যে দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নাইক বলেন, “আগে বছরে একবার বাড়ি যেতে পারতাম। এখন যুদ্ধের পর যুদ্ধ, সব অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। আমি ঠিক করেছি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আর ফিরব না, দেশে থেকেই নতুন করে কাজ খুঁজব।”

গাজা এবং ইরানের সঙ্গে সংঘাতে ইসরায়েলের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রতিদিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, সাইরেন, আতঙ্ক—সব মিলিয়ে প্রবাসীদের জীবন এখন একেকটি মৃত্যুফাঁদে বসবাসের মতো। আর তাই অনেকেরই শেষ সিদ্ধান্ত—যত দ্রুত সম্ভব নিজের দেশে ফিরে যাওয়া।