রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫, ৪:১৮ অপরাহ্ণ
রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন

রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান না হলে এটি দ্রুতই আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকিতে পরিণত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ‘আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর দারিদ্র্য, উন্নয়ন ঘাটতি ও সংঘাতের প্রভাব’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, গত আট বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে এসেছে। কিন্তু দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এ সংকট এখন শুধুই মানবিক নয়; এটি অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং ক্রমবর্ধমানভাবে নিরাপত্তাজনিত ইস্যুতে রূপ নিয়েছে। এ অবস্থায়, মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও অধিকারের নিশ্চয়তার মাধ্যমে দ্রুত প্রত্যাবাসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশের তারুণ্য সম্পর্কে বক্তব্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশের ইতিহাসে তরুণরা সব সময় অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছে— হোক তা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বা সাম্প্রতিক জুলাই বিপ্লব। তবে তরুণরা যদি শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে তারা চরমপন্থার ঝুঁকিতে পড়ে।

তিনি আরও বলেন, দারিদ্র্য, বৈষম্য ও উন্নয়ন ঘাটতি যদি দীর্ঘমেয়াদে চলতে থাকে, তাহলে তা সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতায় পরিণত হতে পারে। বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে তিনি নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের তিনটি শূন্য নীতির (শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব, শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ) কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন, শান্তিপূর্ণ ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে হলে উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে একসূত্রে যুক্ত করতে হবে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন এবং পিসবিল্ডিং কমিশনের মধ্যে আরও সমন্বয়ের আহ্বান জানান যাতে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বাস্তবভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়। তিনি বলেন, সামাজিক ব্যবসার ধারণা—যেটি প্রফেসর ইউনূস প্রবর্তন করেছেন—তা দারিদ্র্য হ্রাস ও সংঘাত প্রতিরোধে কার্যকর পন্থা হতে পারে।

বক্তব্যের শেষাংশে তিনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি সমৃদ্ধ, ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গঠনে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ছাড়াও সুইডেন, উরুগুয়ে, পূর্ব তিমুর, জার্মানি ও অন্যান্য দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।