ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যা নিয়ে ইসরায়েলের স্বীকারোক্তি ও বিশ্লেষকদের মত

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫, ৭:০১ অপরাহ্ণ
ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যা নিয়ে ইসরায়েলের স্বীকারোক্তি ও বিশ্লেষকদের মত

ফ্রান্সে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত জোশুয়া জারকা দাবি করেছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে যুক্ত অন্তত ১৪ জন শীর্ষ বিজ্ঞানীকে ইসরায়েল হত্যা করেছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজ্ঞানীদের হত্যা ইরানের কর্মসূচি সাময়িকভাবে বিলম্বিত করতে পারে, পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়।

জারকা সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানান, ১৩ জুনের প্রথম হামলায় ৯ জন বিজ্ঞানী নিহত হন, যাঁরা পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, ধাতুবিদ্যা ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ ছিলেন। বেঁচে থাকা আরেক বিজ্ঞানী মোহাম্মদ রেজা সিদিঘি সাবেরও পরে মারা যান। এ হত্যাকাণ্ড ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়াকে প্রায় অসম্ভব করে দিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের কাছে এখনও বিকল্প বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তি রয়েছে, যা দিয়ে তারা তাদের পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যেতে সক্ষম। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, কয়েক দশকের গবেষণা ও জ্ঞান একবারের হামলায় মুছে ফেলা যায় না।

মার্ক ফিটজপ্যাট্রিক নামের একজন সাবেক আমেরিকান পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বিশ্লেষক বলেন, যদিও হামলা কর্মসূচি দেরি করাতে পারে, কিন্তু তা বন্ধ করতে পারবে না। নতুন গবেষকরা সহজেই কাজ সম্পন্ন করবে।

রাশিয়ার বিশ্লেষক পাভেল পডভিগ বলেছেন, প্রকৃত সমস্যা ইউরেনিয়াম উপাদানের অস্তিত্ব। তিনি বলেছেন, বিজ্ঞানী হত্যার মাধ্যমে ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে কেউ এই প্রকল্পে যুক্ত হতে না চায়, তবে এ পথ বিপজ্জনক।

ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত জারকা দাবি করেন, হত্যাকাণ্ড ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীদের সতর্ক করবে।

ইরানি বিজ্ঞানী হত্যায় ইসরায়েলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ বহুদিনের, তবে এবার তারা সরাসরি স্বীকার করেছে। ২০২০ সালে শীর্ষ বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ হত্যার জন্যও ইরান ইসরায়েলকে দায়ী করেছিল।

মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বেসামরিক হত্যাকা- নিষিদ্ধ, তবে যদি বিজ্ঞানীরা সামরিক কাজে যুক্ত থাকেন তবে তাদের ক্ষেত্রে আইন ভিন্ন হতে পারে।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভেন আর. ডেভিড বলেন, এই বিজ্ঞানীরা এমন শাসকের জন্য কাজ করছিলেন যারা ইসরায়েলকে ধ্বংসের হুমকি দিয়েছে, তাই তারা বৈধ লক্ষ্যবস্তু। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উদাহরণ টেনে এই ধরনের হত্যা ন্যায্যতা ব্যাখ্যা করেন।

আইন বিশেষজ্ঞ লরি ব্ল্যাংক বলেন, বিজ্ঞানীদের কর্মকাণ্ড ও গোয়েন্দা তথ্য স্পষ্ট না হওয়ায় এই হত্যাকাণ্ড কতটা বৈধ তা এখনই বলা কঠিন।

রাষ্ট্রদূত জারকা বলেন, পদার্থবিদ্যা শেখা আর তা ক্ষেপণাস্ত্রে রূপান্তর করার কাজ ভিন্ন। এসব বিজ্ঞানীর কাছেই এই বিশেষ জ্ঞানের জন্য হামলা চালানো হয়েছে।