জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন, ৬০০ পরিবার ঝুঁকিতে

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫, ১০:১৪ অপরাহ্ণ
জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন, ৬০০ পরিবার ঝুঁকিতে

বর্ষা মৌসুম শুরু হতেই শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত অন্তত ১৩০ মিটার বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এতে বসতঘর, দোকানপাটসহ ২৬টি স্থাপনা নদীতে হারিয়ে গেছে এবং ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে অন্তত ৬০০ পরিবার।

স্থানীয়রা জানান, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে হাটবাজার, ঘরবাড়ি, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং পুরো জনপদ হুমকিতে পড়বে। অনেক পরিবার ইতোমধ্যে নদীপাড় থেকে তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। উপজেলার আলম খার কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি ও ওছিম উদ্দিন মুন্সি কান্দি গ্রামে বসবাসরত শত শত পরিবার বর্তমানে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার জিও ব্যাগ নদীর তীরে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ডাম্পিং করা হয়েছে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান জানান, পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে ৯০ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ চলছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২০১০-২০১১ অর্থবছরে মাঝিরঘাট থেকে পূর্ব নাওডোবা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে সেতু কর্তৃপক্ষ, যার ব্যয় ছিল ১১০ কোটি টাকা। কিন্তু গত বছরের নভেম্বর মাসে এই বাঁধের মাঝিরঘাট অংশে প্রথম ধস দেখা দেয় এবং ১০০ মিটার বাঁধ নদীতে ধসে পড়ে। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সেখানে জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়।

গত সোমবার (৭ জুলাই) বিকেলে নতুন করে ভাঙনের ঘটনায় মাত্র দুই ঘণ্টায় নদীগর্ভে বিলীন হয় ১৬টি বাড়ি ও ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আতঙ্কে আরও ১৫টি দোকান সরিয়ে নেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দা সুমন হাওলাদার জানান, পদ্মার গতিপথ পরিবর্তনের কারণে এই এলাকায় গত বছর থেকেই ভাঙন শুরু হয়েছে। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে শত শত পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়বে।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে। ইতোমধ্যে বাড়িঘর হারানো ২৬টি পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা করে চেক, দুই বান টিন ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পুনর্বাসনের জন্যও কাজ চলছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিতে থাকা স্থানীয়রা বলছেন, অস্থায়ী পদক্ষেপ নয়, পদ্মার ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজন স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ এবং একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা। তারা দ্রুত টেকসই সমাধান নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।