ফেনীতে টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যা, লাখো মানুষ পানিবন্দি

ফেনীতে কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। ফুলগাজী, পরশুরামের পর এবার ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার শতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার ফলে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় পড়েছেন। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রয়েছে।
মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ২১টি স্থানে ভাঙনের কারণে নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। এতে ফেনীর চার উপজেলায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বন্যা দুর্গত এলাকায় সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় নদীগুলোর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যার ফলে পরশুরামে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ফুলগাজী ও আশপাশের নিম্নাঞ্চলে পানি স্থির রয়েছে। নতুন করে ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। ফেনী-ফুলগাজী ও ফেনী-ছাগলনাইয়া আঞ্চলিক সড়কের কিছু অংশ এখনও পানির নিচে রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, চার উপজেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছেন। খাদ্য সহায়তা প্রদানেও বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে।
শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর, রাধানগর ও পৌর এলাকার অন্তত ১০টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। ফেনী সদর উপজেলার কাজীরবাগ, মোটবী, ছনুয়া ও ফাজিলপুর ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় বসতবাড়ি ও পুকুরের মাছ ডুবে গেছে, কৃষি জমিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৫৮.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টি কমায় পরিস্থিতির উন্নতির আশা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন মজুমদার জানান, মুহুরী নদীর পানি বর্তমানে বিপদসীমার দুই মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির চাপ কমে যাওয়ায় নতুন বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা নেই। পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ভাঙনস্থানে মেরামত কাজ শুরু করা হবে।
ফেনীর জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “পরশুরামে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, ফুলগাজীতেও স্থিতিশীলতা এসেছে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে ছাগলনাইয়ার প্রধান সড়ক দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, বৃষ্টি না হলে আজকের মধ্যেই বন্যার পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে।
আপনার মতামত লিখুন