এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তাকে বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর ও কাস্টমস বিভাগের ১৪ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে জারি করা একাধিক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানা যায়।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ছয় কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন কর অঞ্চল-৮, ঢাকার অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা, এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব ও উপ কমিশনার মো. শাহাদাত জামিল, মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার, অতিরিক্ত কমিশনার ও ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক সিফাত ই মরিয়ম, ঢাকা উত্তর কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা সবুজ মিয়া এবং খুলনা ভ্যাট কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল বশর। তাদের মধ্যে হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি ছিলেন।
এছাড়াও একই দিনে কর বিভাগের আরও পাঁচ যুগ্ম কর কমিশনার ও তিনজন উপ কর কমিশনারকে একই অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরা হলেন—কর অঞ্চল ২ এর মাসুমা খাতুন, কর অঞ্চল ১৫ এর মুরাদ আহমদ, কুষ্টিয়ার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দিন, নোয়াখালীর মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, কক্সবাজারের আশরাফুল আলম প্রধান এবং উপ কর কমিশনার শিহাবুল ইসলাম, রংপুরের নুসরাত জাহান শমী এবং কুমিল্লার উপ কর কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান শাকিল। জানা গেছে, বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা এনবিআর সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, গত ২২ জুন জারি করা বদলির আদেশ অমান্য করে প্রকাশ্যে তা ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে এ কর্মকর্তারা সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৩৯ (১) ধারা অনুযায়ী ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। ফলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে এবং তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকালীন সময়ে সরকারি বিধি অনুযায়ী তারা খোরপোষ ভাতা পাবেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ২১ ও ২২ জুন এনবিআরের পক্ষ থেকে দুই দফায় বদলির আদেশ জারি করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করে আন্দোলনে অংশ নেন। ২৪ জুন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রতিবাদস্বরূপ বদলির আদেশের কপি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলা হয়। এরপর থেকেই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়।
এর আগে, ১ জুলাই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. জাকির হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে ওএসডি করা হয় এবং ২ জুলাই কর বিভাগের সদস্য মো. আলমগীর হোসেন, মূসক নীতির সদস্য ড. আবদুর রউফ, শুল্ক নীতির সদস্য হোসেন আহমদ এবং বরিশালের কর কমিশনার মো. শব্বির আহমদকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপগুলো এনবিআরের ভেতরে চলমান সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রশাসনিক উত্তেজনা এবং দ্বন্দ্বেরই প্রতিফলন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আপনার মতামত লিখুন