সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫, ৬:০৩ অপরাহ্ণ
সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৭ জন সংখ্যালঘু নাগরিক নিহত হয়েছেন—হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার এমন দাবিকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ পুলিশ সদরদপ্তর। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশের পক্ষ থেকে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।

ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১১ মাসে দেশে ২ হাজার ৪৪২টি সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তারা আরও দাবি করে, নিহত ২৭ জন সংখ্যালঘুর মৃত্যুতে ধর্মীয় বিদ্বেষ ও সহিংসতা জড়িত ছিল।

এর জবাবে পুলিশ জানায়, ওই ২৭টি মৃত্যুর ঘটনায় ২২টিতে হত্যা মামলা এবং ৫টি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, এসব ঘটনার পেছনে ছিল পারিবারিক বিরোধ, জমিজমা সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব, আর্থিক লেনদেন, সন্ত্রাসী দ্বন্দ্ব, আত্মহত্যা, এবং দুর্ঘটনা। উদাহরণস্বরূপ, এক ঘটনায় ভাতিজা চাচাকে হত্যা করেছে, আরেকটিতে চাচাতো ভাইয়ের মারামারিতে প্রাণহানি হয়। মাদক কেনাবেচার টাকা নিয়ে বিরোধ এবং ডাকাতির ঘটনাতেও দুজন নিহত হয়েছেন।

পুলিশ আরও জানায়, দস্যুতার ঘটনায় ৭ জন মারা যান, যাদের মধ্যে একজন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য সন্দেহে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন। তরমুজ কেনাবেচা নিয়ে সংঘর্ষে একজন প্রাণ হারান। এছাড়া আত্মহত্যা, ভবঘুরে, মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধার, এবং দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুগুলোকেও সংখ্যালঘু হত্যা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি।

এছাড়াও সংখ্যালঘু ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও যৌন হয়রানির যে ২০টি ঘটনার কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে ১৬টিতে মামলা হয়েছে এবং পুলিশ ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে রাজশাহীর তানোর ও মাগুরার শ্রীপুরের দুটি আলোচিত ঘটনার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়নি, এবং কোনো মামলা হয়নি।

গত বছর ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ও উপাসনালয় ঘিরে ১২৭টি সহিংসতার ঘটনার কথাও ঐক্য পরিষদ উল্লেখ করে। পুলিশ জানায়, এর মধ্যে ৬৬টি ঘটনায় মামলা ও ৬১টি ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে এবং মোট ৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মন্দিরে চুরি, প্রতিমা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, জমি দখলসহ ৬০টি অভিযোগের মধ্যে চুরির ২০টি ঘটনায় তদন্তে প্রমাণ মিলেছে, যার মধ্যে ১৪টি নিয়মিত মামলা এবং ৫টি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। প্রতিমা বা মন্দির ভাঙচুরের ২৪টি ঘটনার মধ্যে ১৮টি মামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ১০ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।

অগ্নিসংযোগের চারটি ঘটনার মধ্যে দুইটির পেছনে কোনো নাশকতার প্রমাণ মেলেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ। জমি ও সীমানা সংক্রান্ত চারটি ঘটনার মধ্যে দুটি স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে মীমাংসা হয়েছে। অন্যদিকে খিলক্ষেতে বাংলাদেশ রেলওয়ের জমিতে থাকা একটি অস্থায়ী পূজামণ্ডপ উচ্ছেদ করা হয় প্রশাসনের যৌথ অভিযানে। বগুড়ায় শ্মশানঘাটের পিলার ভাঙার ঘটনায় প্রশাসন নতুন করে শ্মশানঘাট নির্মাণ করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিটি ঘটনায় তারা আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে এবং ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সব ধরনের ধর্মীয় স্থাপনার নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে তা বিবেচনায় নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।