মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের গণতন্ত্র ও আধুনিক সভ্যতা নিয়ে চিন্তা

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ গণতন্ত্রকে দুর্বলতার কারণ হিসেবে দেখেন এবং বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের চেয়ে মাত্র দুই দলের গণতন্ত্র অধিক ফলপ্রসূ। তাঁর মতে, দুই দল থাকলে একটি দল জিতবে, অপরটি পরাজিত হবে, যা একটি শক্তিশালী সরকার গঠনে সহায়ক হবে।
জন্মশতবার্ষিকীর আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাহাথির বলেন, “সবাই নেতা হতে চায়, তাই রাজনৈতিক দলগুলো ছোট ছোট হয়ে বিভক্ত হয়, যার ফলে কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে না এবং অনেক সময় গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়।” তিনি গণতন্ত্রকে মানুষের তৈরি পদ্ধতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা নিখুঁত নয় এবং সঠিক প্রয়োগ ছাড়া ভালো ফল দেয় না।
আধুনিক সভ্যতাও ব্যর্থ
মাহাথির আধুনিক সভ্যতার সফলতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেন। তিনি বলেন, “মানবিক মূল্যবোধ প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে এবং মানুষ আবার বর্বরতায় ফিরে যাচ্ছে।” গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ গণহত্যার পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র এতে মদদ দিচ্ছে। এটি পশ্চিমা সভ্যতার পতনের লক্ষণ।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে বলেও মন্তব্য করেন।
রাজনীতিতে পাঁচ দশকের পথচলা
মাহাথির ১৯২৫ সালের ১০ জুলাই মালয়েশিয়ার কেদাহ প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় চিকিৎসক হলেও মাত্র ২১ বছর বয়সে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৬৪ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত ২২ বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তাঁর শাসনামলে মালয়েশিয়া অর্থনৈতিক উন্নয়নে অভূতপূর্ব সাফল্য পায়। ২০১৮ সালে আবার প্রধানমন্ত্রী হন, তবে দুই বছর পর পদত্যাগ করেন।
শতায়ুর রহস্য ও ব্যক্তিজীবন
মাহাথির জানান, দীর্ঘ ও সক্রিয় জীবনের জন্য তিনি নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, মস্তিষ্ক সচল রাখতে পড়াশোনা, লেখা ও বিতর্কে অংশ নেন। তিনি স্ত্রী সিতি হাসমাহকে তাঁর সারাজীবনের সঙ্গী হিসেবে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করেন।
মালয়েশিয়া ও মুসলিম বিশ্ব নিয়ে ভাবনা
ভবিষ্যতের জন্য তিনি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং বলেন, জনগণকে শিক্ষিত করতে হবে যাতে তারা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের অভাবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ওআইসির কার্যকর না হওয়ার কারণ হিসেবে সর্বসম্মতির বাধাকে উল্লেখ করেন।
“আমি ইতিহাসের ওপর ছেড়ে দিলাম”
নিজের অর্জন নিয়ে মাহাথির বলেন, “আমি নিজেকে মূল্যায়ন করব না, ইতিহাসই বলবে আমি কী করেছি। আমার দেশের জন্য কাজ করাটাই আমার সবচেয়ে বড় তৃপ্তি।”
আপনার মতামত লিখুন