গরীবপুর যুদ্ধক্ষেত্রের স্মৃতিবাহী সড়ক আজ অবহেলায় ধুঁকছে

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫, ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ
গরীবপুর যুদ্ধক্ষেত্রের স্মৃতিবাহী সড়ক আজ অবহেলায় ধুঁকছে

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত যশোরের চৌগাছা উপজেলার গরীবপুর গ্রামের স্মৃতি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। ১৯৭১ সালের ২১ ও ২২ নভেম্বর গরীবপুর-জগন্নাথপুর এলাকায় মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সঙ্গে পাক হানাদার বাহিনীর তীব্র সম্মুখযুদ্ধ হয়, যা দেশের ইতিহাসে বিরল ট্যাংকযুদ্ধে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু সেই গৌরবময় যুদ্ধক্ষেত্র সংলগ্ন গরীবপুর নিউ মার্কেট মোড় থেকে পূর্বপাড়া পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি এখন বেহাল দশায় রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তা কাদায় পরিণত হয়, সৃষ্টি হয় বড় বড় গর্ত ও জলাবদ্ধতা। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থী, রোগী, নামাজের মুসল্লি এবং ভ্যান-ইজিবাইক চালকদের। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই রাস্তার পাশ দিয়েই মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে অংশ নিতে প্রবেশ করেছিলেন। অথচ এখন সেই ঐতিহাসিক পথ দিয়ে চলাচল দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ বলেন, রাস্তার কিছু স্থানে প্রাথমিকভাবে সলিং করা হলেও তা পুকুর ভাঙন ও পানির চাপে ধসে পড়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আশিকুর রহমান জানান, সড়কটির পূর্ণ সংস্কার, পিচঢালাই, প্যালাসাইড নির্মাণ ও কালভার্ট স্থাপন এখন সময়ের দাবি। প্রতিদিন প্রায় এক হাজার মানুষ এই রাস্তা ব্যবহার করলেও এটি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যে, ২১ নভেম্বর ঈদের দিন দুপুরে শুরু হওয়া তীব্র গোলাগুলিতে ৭টি ট্যাংক হারিয়ে পাক হানাদার বাহিনী পিছু হটে এবং চৌগাছা ছেড়ে চট্টগ্রাম চলে যায়। সেই যুদ্ধ শুধু কৌশলগত নয়, এক পর্যায়ে তা হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়—যা ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী ঘটনা।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর আহ্বায়ক রাশিদুল ইসলাম রিতম বলেন, এই রাস্তা কেবল চলাচলের জন্য নয়, এটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের পথে হাঁটার প্রতীক। এই অবহেলা নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুল বার্তা দেয়। উন্নয়ন না হলে এই ইতিহাস হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। উপজেলা প্রকৌশলী রিয়াসাত ইমতিয়াজ জানান, সড়কটি ভিপিপি প্রকল্পে প্রস্তাব আকারে উর্ধ্বতন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে এবং তা তালিকাভুক্ত হয়েছে। অনুমোদন পেলেই দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু হবে।

এলাকাবাসীর জোরালো দাবি, গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহনকারী এই সড়কটির উন্নয়ন শুধু ভৌত অবকাঠামোর প্রশ্ন নয়, এটি ইতিহাস, আত্মত্যাগ ও জাতীয় চেতনাকে সম্মান জানানোর প্রতীকী দায়িত্ব। এজন্য রাস্তার দ্রুত সংস্কার এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি হয়ে উঠেছে।