ইয়ারলুং জাংবো নদীতে চীনের মেগা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধন: বাংলাদেশ-ভারতের জন্য উদ্বেগ

হিমালয়ের পাদদেশে, যেখানে একসময় ইয়ারলুং সভ্যতা তিব্বতের প্রথম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল, সেখানেই এবার শুরু হলো বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প। শনিবার (২০ জুলাই) চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইয়ারলুং জাংবো নদীতে ৬০ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই মেগা-বাঁধের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং।
ইয়ারলুং জাংবো নদী, যা ভারত ও বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত, দুই দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন-জীবিকার অন্যতম ভিত্তি। চীনের এই প্রকল্প নিয়ে তাই ভারত ও বাংলাদেশে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রকল্পের বিশদ বিবরণ:
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া জানিয়েছে, প্রকল্পটিতে পাঁচটি পৃথক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যার মোট ব্যয় প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।
২০২০ সালে এই বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা প্রকাশ করে বেইজিং। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে এটি চীনের অন্যতম প্রধান উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পরিবেশ ও প্রতিবেশীদের শঙ্কা
তিব্বতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নিংচি অঞ্চলে গড়ে উঠতে যাওয়া এই মেগা-বাঁধ প্রকৃতি ও প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে বলে সতর্ক করেছেন পরিবেশবিদরা। তিব্বত মালভূমি অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি অঞ্চল। সেখানে এমন প্রকল্প নির্মাণে অপূরণীয় পরিবেশগত ক্ষতি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
ভারত এই প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে চীনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, উজানের যে কোনো কার্যক্রম যেন ভাটির দেশের স্বার্থে আঘাত না করে, সে বিষয়ে চীনকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে বলা হয়েছে।
চীন অবশ্য দাবি করেছে, এই বাঁধ নির্মাণে নিম্নপ্রবাহে কোনও ‘নেতিবাচক প্রভাব’ পড়বে না এবং ভাটির দেশগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হবে।
মানবাধিকার ও স্থানচ্যুতি
থ্রি গর্জেস বাঁধ নির্মাণের সময় চীন প্রায় ১৪ লাখ মানুষকে স্থানচ্যুত করেছিল। যদিও ইয়ারলুং জাংবো নদীর এলাকাটি তুলনামূলক কম জনবসতিপূর্ণ, তবে এই প্রকল্পে ঠিক কত মানুষ বাস্তুচ্যুত হবেন—তা এখনো প্রকাশ করেনি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান Power Construction Corporation of China।
দক্ষিণ এশিয়ার পানি নিরাপত্তার জন্য হুমকি?
ইয়ারলুং জাংবো বা ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে ভারত, বাংলাদেশ ও ভুটানসহ প্রায় ১৮০ কোটি মানুষ মিষ্টি পানির জোগান পান। চীনের এই উজান নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে ভাটির দেশগুলোতে পানির প্রবাহ, কৃষি, মৎস্য, ও জীববৈচিত্র্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রকল্প শুধু একক পরিবেশ সংকট নয়, বরং এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য কৌশলগত জল-রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে
আপনার মতামত লিখুন