গাজায় আরও ১১৬ ফিলিস্তিনি নিহত, অনাহারে মৃত্যু ৩৫ দিনের শিশুর

গাজার অবরুদ্ধ পরিস্থিতি ও মানবিক সহায়তা বন্ধের মধ্যেই ফিলিস্তিনে মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানায়, শনিবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১১৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই দিনে অনাহারে মারা গেছে মাত্র ৩৫ দিন বয়সী এক শিশু।
গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুহাম্মদ আবু সালমিয়া জানান, শিশুটি অপুষ্টির কারণে মারা যায়। তিনি আরও বলেন, “আমাদের হাসপাতালে এদিন অন্তত দুইজন অনাহারে মারা গেছেন।”
নিহত ১১৬ জনের মধ্যে ৩৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) সহায়তা কেন্দ্রের সামনে গুলিতে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, তারা খাবারের আশায় ভিড় করেছিলেন, তখন ইসরায়েলি বাহিনী ট্যাংক ও জিপ নিয়ে এসে গুলি চালায়।
মোহাম্মদ আল-খালিদি নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমরা পালাতে চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ওরা গুলি শুরু করে।” আরেকজন, মোহাম্মদ আল-বারবারি বলেন, “এই সহায়তা কেন্দ্রগুলো আসলে মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে।”
গাজার সিভিল ডিফেন্স জানায়, খান ইউনিস ও রাফাহের বিভিন্ন স্থানে এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সেখানকার হাসপাতালগুলোতে জরুরি বিভাগে হাজারো মানুষ খাবারের অভাবে কাতর অবস্থায় আসছেন। অন্তত ১৭ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট ফেডারেশনের মহাসচিব জগন চাপাগাইন বলেন, “গাজায় এখন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কাউকে যেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাবার খুঁজতে না হয়।”
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান ইয়ান এগেল্যান্ড জানান, “গত ১৪২ দিনে আমরা একটি ত্রাণবাহী ট্রাকও গাজায় প্রবেশ করাতে পারিনি।”
জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, মিসরের সীমান্তে গাজার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রয়েছে, তবে ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে সেগুলো ঢুকতে পারছে না। সংস্থাটি স্পষ্ট করে বলেছে, “সীমান্ত খুলুন, অবরোধ তুলে নিন এবং আমাদের কাজ করতে দিন।”
বর্তমানে গাজার বাজারগুলোতে চরম পণ্যসঙ্কট দেখা দিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব ও মূল্যবৃদ্ধির ফলে ২৩ লাখ মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি সংগ্রহ করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মানবিক সংকট শুধু গাজার ভবিষ্যৎকেই অনিশ্চিত করছে না, বরং সমগ্র আন্তর্জাতিক সমাজের দায়বোধ এবং ন্যায়বিচার নিয়েও বড় প্রশ্ন তুলছে।
আপনার মতামত লিখুন