তাবলিগ জামাতকে করোনার জন্য দায়ী করার অভিযোগ খারিজ, দিল্লি হাইকোর্টের রায়ে আইনি মুক্তি

২০২০ সালে দিল্লির নিজামুদ্দিনে অনুষ্ঠিত তাবলিগ জামাতকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য দায়ী করে যে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, দিল্লি হাইকোর্ট তা সম্পূর্ণভাবে খারিজ করে দিয়েছে। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, পুলিশের পক্ষ থেকে আনা কোনো অভিযোগই প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। বিচারপতি নীনা বনসল কৃষ্ণা মামলাটি খারিজ করে দিয়ে বলেন, “ওটা ছিল এক অসহনীয় পরিস্থিতি। অভিযুক্তরা সবাই বাধ্য হয়ে গৃহবন্দী ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের অভিযোগ কোনোভাবেই টেকে না।”
এই মামলায় দিল্লি পুলিশ ভারতীয় ৭০ জন নাগরিকের বিরুদ্ধে দায়ের করেছিল ১৬টি এফআইআর এবং ১৯৫ জন বিদেশিকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, যারা তাবলিগ জামাতে অংশ নিতে ভারতে এসেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং সরকারি আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়।
২০২০ সালের মার্চ মাসে ৯ ও ১০ তারিখে তাবলিগ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৩ মার্চ দিল্লি পুলিশ জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং ২৫ মার্চ কেন্দ্রীয় সরকার হঠাৎ করে দেশব্যাপী লকডাউনের ঘোষণা দেয়। এরই মধ্যে তাবলিগ জামাতে অংশগ্রহণকারী হাজারো মানুষ আটকে পড়েন।
সেই সময় ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যে তাবলিগ জামাতকে করোনার উৎস বলে দায়ী করেন। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে মামলাও দায়ের করা হয়, যা দেশজুড়ে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগের জন্ম দেয়।
হাইকোর্ট প্রশ্ন তোলে, “এই মানুষগুলো, বিশেষ করে বিদেশিরা, হঠাৎ লকডাউনের মধ্যে কোথায় যেতে পারতেন? তাদের কোনো অপরাধ সংঘটনের প্রমাণ কি পাওয়া গেছে?” আদালত স্পষ্টভাবে জানায়, অভিযুক্তরা মহামারি আইন বা বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের কোনো ধারা লঙ্ঘন করেননি।
এই রায়ের মাধ্যমে তাবলিগ জামাতে অংশ নেওয়া ভারতীয় এবং বিদেশি মুসল্লিরা পাঁচ বছর পর আইনি দায়মুক্তি পেলেন। এই রায় শুধু একটি মামলার নিষ্পত্তি নয়, বরং রাষ্ট্রীয় একপেশে অভিযোগের বিপরীতে ন্যায়বিচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন