যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের সম্পদ লেনদেন, দুর্নীতিবিরোধী তদন্তে নতুন মোড়

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫, ৯:১৬ অপরাহ্ণ
যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের সম্পদ লেনদেন, দুর্নীতিবিরোধী তদন্তে নতুন মোড়

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারানোর পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের যুক্তরাজ্যভিত্তিক সম্পত্তি লেনদেনের ঘটনায় নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোর চলমান তদন্তের মাঝেই তারা যুক্তরাজ্যে তাদের সম্পদ বিক্রি, বন্ধক বা হস্তান্তরের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ব্রিটেনের জমি নিবন্ধন দপ্তরের তথ্যমতে, গত এক বছরে এমন অন্তত ২০টি সম্পদ লেনদেনসংক্রান্ত আবেদন জমা পড়েছে, যার সঙ্গে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট।

এই তথ্য উঠে এসেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ও আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের যৌথ অনুসন্ধানে। ১৯ জুলাই প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের প্রায় এক বছর পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। এরই মধ্যে লন্ডনের নাইটসব্রিজ ও সারের মতো অভিজাত এলাকায় থাকা বিশাল বিলাসবহুল বাড়িগুলোর মালিকানা ও লেনদেন প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং অন্যান্য সংস্থা পুরনো সরকারের ঘনিষ্ঠদের বিদেশে অর্থ পাচার ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের তদন্ত করছে। গত মে মাসে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) বেক্সিমকো কর্ণধার ও শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে ও ভাতিজার নামে থাকা প্রায় ১,৪৬৯ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করে। এরপর সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রায় ১৭০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদও জব্দ করে এনসিএ। জানা যায়, তার নামে যুক্তরাজ্যে ৩০০টিরও বেশি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও টাউনহাউস রয়েছে।

অনুসন্ধানে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের অনেকে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে তাদের সম্পদ বিক্রি বা বন্ধক রেখেছেন। এর ফলে প্রশ্ন উঠেছে—এই লেনদেনগুলোতে যুক্তরাজ্যের আইন ও নিবন্ধন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা কতটা দায়মুক্ত। জমি নিবন্ধন সংস্থার নথি অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মাধ্যমে অন্তত ২০টি সম্পদের বিক্রি, মালিকানা হস্তান্তর বা বন্ধকের আবেদন জমা পড়ে।

দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অবৈধ সম্পদের সঙ্গে তার ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও এক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। আনিসুজ্জামানের চারটি সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা করা হয়েছে। এর মধ্যে রিজেন্টস পার্কের কাছে একটি জর্জিয়ান টাউনহাউস ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বিক্রি হয়ে যায়। আরও তিনটি সম্পত্তির লেনদেন আবেদন জমা দেওয়া হয় পরে। যদিও তার আইনজীবীরা দাবি করেছেন, বিক্রির কোনো আইনগত বাধা ছিল না, কারণ তা আগেই সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান এবং ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের সম্পত্তি সম্পর্কেও তিনটি নতুন লেনদেন আবেদন জমা পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক উপ-গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে এসব লেনদেন বন্ধ করে আরও সম্পদ জব্দের ব্যবস্থা নিতে। তার মতে, লেনদেন বন্ধ করা গেলে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব সম্পদ ফিরিয়ে আনার সুযোগ তৈরি হতে পারে।

দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেনও জানিয়েছেন, দেশের বিপ্লব-পরবর্তী এই সময়টিকে মাথায় রেখে এনসিএকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে সম্পদ লেনদেন বন্ধ করা যায় এবং দুর্নীতির সম্পূর্ণ চিত্র উন্মোচন করা সম্ভব হয়।