শান্তি আলোচনায় আগ্রহী ইউক্রেন, রাশিয়ার অবস্থান এখনো অনিশ্চিত

রাশিয়ার সঙ্গে আবারও শান্তি আলোচনায় বসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইউক্রেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শনিবার এক ভিডিও বার্তায় জানান, যুদ্ধবিরতির পথ খুঁজে পেতে যা যা প্রয়োজন, তার সবকিছু করতে প্রস্তুত কিয়েভ। তিনি বলেন, যুদ্ধ থামাতে হলে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করতে হবে—রাশিয়ার আর পালানোর সুযোগ নেই, তাদের সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।
জেলেনস্কি আরও জানান, ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের নবনিযুক্ত প্রধান রুস্তেম উমেরভ রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরুর প্রস্তাব দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে বসার আগ্রহও আবার প্রকাশ করেন। তার ভাষায়, “স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে নেতৃত্ব পর্যায়ের আলোচনা অত্যন্ত জরুরি।”
তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবের বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ অতীতেও শান্তি আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন, তবে তখন আলোচনা সীমিত ছিল কেবল বন্দি ও মৃতদেহ বিনিময়ের মধ্যে। সেসময় রাশিয়া চারটি দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার শর্ত প্রত্যাখ্যান করে এবং পশ্চিমা সামরিক সহায়তা নিয়েও আপত্তি তোলে, যা ইউক্রেন মানেনি।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে কিছুটা নমনীয় সুর লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গত শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, জেলেনস্কির শান্তি আলোচনার মন্তব্যের সঙ্গে মস্কো একমত। অনেকের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির কারণেই রাশিয়া কিছুটা অবস্থান পরিবর্তনের চিন্তা করছে। ট্রাম্প ৫০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন, নচেৎ রুশ পণ্যে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ও রুশ তেল আমদানির ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দেন।
তবে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা একে ‘ওয়াশিংটনের ব্ল্যাকমেইল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং দাবি করেন, ইউক্রেন প্রকৃতপক্ষে শান্তি নয়, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কৌশল নিচ্ছে।
এই উত্তেজনার মধ্যেই কিয়েভ শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিলেও যুদ্ধক্ষেত্রে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। শনিবার ভোরে রাশিয়া ওডেসা বন্দরে ড্রোন হামলা চালায়, যাতে একজন নিহত এবং ছয়জন আহত হন। একই রাতে সারা ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়া ৩০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৩০০ ড্রোন নিক্ষেপ করে, যার প্রভাব পড়ে অন্তত ১০টি অঞ্চলে।
পাল্টা হামলায় ইউক্রেনও রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলে ড্রোন হামলা চালায়, এতে একজন রেলকর্মী আহত হন এবং কয়েক ঘণ্টার জন্য রেল চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন জানান, শনিবার রুশ রাজধানীর আকাশে ইউক্রেনীয় ড্রোন প্রতিহত করা হয়েছে। এর ফলে ভনুকোভো ও ডোমোদেদোভো বিমানবন্দরের ফ্লাইট সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, তারা বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ২৭টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে।
আপনার মতামত লিখুন