গুলশানে চাঁদাবাজির অভিযোগে পাঁচজন আটক, বহিষ্কার ঝড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদে অস্থিরতা

রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদসহ পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছে গুলশান থানা পুলিশ।
আটকের পরপরই সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য সাকাদাউন সিয়াম এবং সাদাবকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অসদাচরণের অভিযোগে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের এক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু ও সদস্য আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমানকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদের মধ্যে আবদুর রাজ্জাকের ফেসবুক প্রোফাইলে ‘রিয়াদ’ নামটি যুক্ত আছে এবং পুলিশের প্রকাশিত তালিকায়ও রিয়াদ নামটি ছিল বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
ঘটনার পর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট ও ধারাবাহিক মন্তব্যের মাধ্যমে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
মাহিন সরকার তার পোস্টে উল্লেখ করেন, আটক হওয়া আবদুর রাজ্জাক নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য বলে দাবি করতেন। এমন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত একজন ছাত্র প্রতিনিধি হয়ে কেউ কীভাবে এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়, সেটি তদন্ত করে সামনে আনার দাবি জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, জানে আলম অপু আগে থেকেই দুর্নীতিবিরোধী কথাবার্তার জন্য পরিচিত হলেও তার বিরুদ্ধে জয়পুরহাটে নানা অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন আন্দোলনের নামে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলে সে ও তার আশপাশের কয়েকজন।
ইব্রাহিম হোসেন মুন্নার বিষয়ে মাহিন সরকার বলেন, এই ঘটনায় তার ভূমিকাই সবচেয়ে প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি পূর্বে ঢাকা মহানগর কমিটি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এবং সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাচনে একটি কেন্দ্রীয় পদে বিজয়ী হয়েও দায়িত্ব গ্রহণ করেননি—যা ছিল অস্বাভাবিক ও অস্পষ্ট।
মাহিন সরকার স্পষ্ট করে বলেন, ইব্রাহিম ও অপু দুজনেই সংগঠনের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতা ছিলেন এবং তাদের সঙ্গে অনেকেরই ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাই চাঁদাবাজির ঘটনায় শুধুমাত্র আটকের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে রিমান্ডে নিয়ে প্রকৃত কুশীলবদের বের করে আনা এখন সময়ের দাবি।
তার মতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার একসময় ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখলেও বর্তমান বাস্তবতায় এই ব্যানারের যৌক্তিকতা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। যদিও এই ব্যানার গঠনে তার নিজেরও ভূমিকা ছিল, তবে এখন তিনি মনে করছেন এর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।
এই ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিকমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, যা সংগঠনগুলোর ভবিষ্যত কার্যক্রম ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
আপনার মতামত লিখুন