ছাইনুমে মারমার গল্প: পাহাড় পেরিয়েছেন, কিন্তু টিকতে লড়ছেন দারিদ্র্যের সাথে

বান্দরবানের দুর্গম ফাইতংয়ের ভাজাপাড়া গ্রামের মেয়ে ছাইনুমে মারমা। অসংখ্য বাধা আর প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। প্রমাণ করেছেন—ইচ্ছাশক্তি ও মেধার কাছে পাহাড়ও হার মানে। কিন্তু এখন তার সামনে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকে থাকার এই লড়াইটাই হয়ে উঠেছে তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন যুদ্ধ।
ছাইনুমে লামা উপজেলার এক দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। শৈশব থেকেই কষ্ট ছিল তার নিত্যসঙ্গী। অনেক সময় খালি পেটে, পায়ে হেঁটে পাহাড়ি পথ পেরিয়ে তিনি স্কুলে যেতেন। তবুও থেমে যাননি। ২০২২ সালে হারবাং শাক্যমুনি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০২৪ সালে বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে এলাকায় সাড়া ফেলে দেন।
ভর্তি পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্বপ্ন ছিল আইনজীবী হওয়ার, তাই পছন্দের বিষয় আইন নিয়ে ভর্তি হন রাবিতে। কিন্তু বাসা ভাড়া, খাবার, যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ বহন করা তার পরিবারের পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
ছাইনুমে বলেন,
‘আমি চাই আইনজীবী হয়ে পার্বত্য অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে। কিন্তু টাকার অভাবে আমার পড়াশোনাই এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এখন যদি কেউ পাশে না দাঁড়ায়, হয়তো পড়ালেখাই বন্ধ হয়ে যাবে।’
তার বাবা থোয়াহ্লাখই মারমা বলেন,
‘ক্ষেতে কাজ করে কোনোমতে সংসার চালাই। মেয়েকে এত দূর এনেছি, কিন্তু এখন আর পারছি না।’
ছাইনুমে তিন ভাইবোনের মধ্যে মেঝো। বড় ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে পড়ছেন, আর ছোট বোনের পড়াশোনা ইতোমধ্যে আর্থিক অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল হাসান বলেন,
‘ছাইনুমে ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী। ও যদি সাহায্য পায়, একদিন সমাজের গর্ব হবে। আমাদের মতো পাহাড়ি এলাকার সন্তানদের জন্য ও একটা বড় অনুপ্রেরণা।’
শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল মনে করেন, ছাইনুমের মতো শিক্ষার্থীরা যদি সমাজিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়, তবে পাহাড়ের সম্ভাবনাগুলো অন্ধকারেই হারিয়ে যাবে।
আপনার মতামত লিখুন