২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট: সংকোচনের পথে বাংলাদেশের প্রথম উদ্যোগ

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এটি সরকারের প্রথম বাজেট, যা সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলে উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বাজেটের ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, আর অনুদান বাদ দিলে প্রকৃত ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
এই বাজেটে পরিচালন ও অন্যান্য ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংগ্রহ করবে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি এবং অন্যান্য উৎস থেকে আসবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা আসবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে বৈদেশিক উৎস থেকে। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের জন্য ৪২০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি একটি সংকোচনমূলক বাজেট, যার আকার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথমবার বাজেটের আকার কমানো হলো।
গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর মধ্যে সুদ পরিশোধ বাবদ ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা, জন প্রশাসনে ১ লাখ ২১ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা খাতে ৪১ হাজার ৮০ কোটি টাকা, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা, কৃষিতে ৪৬ হাজার ৬১০ কোটি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণে ৪১ হাজার ৯০৮ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ২২ হাজার ৯১০ কোটি এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৩৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ৫.৫ শতাংশ ও ৬ শতাংশ। বাজেটে কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক ও কর বাড়ানো এবং কিছু পণ্যের ওপর কমানোর প্রস্তাব এসেছে, যার প্রভাব বাজারে পণ্যের দামে পড়বে।
বাজেট অনুযায়ী যেসব পণ্যের দাম বাড়বে, সেগুলো হলো সিগারেট, লিপস্টিক, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, রাস্তার উপকরণ, ওটিটি সেবা, আমদানিকৃত এলইডি লাইট, অনলাইন কেনা ব্লেড এবং কৃত্রিম আঁশ। অন্যদিকে, দাম কমবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার ও এয়ার কন্ডিশনার, স্যানিটারি ন্যাপকিন, প্যাকেটজাত তরল দুধ, চিনি, বল পয়েন্ট কলম, জমির নিবন্ধন ফি, ইন্টারনেট সেবা এবং বাস ও মাইক্রোবাসে।
সরকার আশা করছে, এই বাজেটের মাধ্যমে অর্থনীতি একটি স্থিতিশীল পথে এগিয়ে যাবে এবং সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
আপনার মতামত লিখুন