মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে গণ্য করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে, মুজিবনগর সরকার গঠনে যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এই সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশে, যা আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার রাতে জারি করেছে।
মুজিবনগর সরকার ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার হিসেবে গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকার কারণে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। সরকারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ।
অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম জানিয়েছেন, মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন, কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন। তিনি বলেন, যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে দেখা গেছে মুজিবনগর সরকারের কিছু কর্মচারী ভুলক্রমে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে গণ্য হচ্ছেন, যারা আসলে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’। এই অধ্যাদেশে কাউকে বাতিল করা হয়নি, বরং সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। যাঁরা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, তাঁরা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে থাকবেন, অন্যরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হবেন।
সংশোধিত অধ্যাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের পাঁচটি শ্রেণি নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম শ্রেণি হলো মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশি পেশাজীবীরা, যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছেন এবং বিশ্বজনমত গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। দ্বিতীয় শ্রেণিতে আছেন মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারী, দূত, নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও সহকারী কর্মকর্তারা। তৃতীয় শ্রেণি হলো মুক্তিযুদ্ধকালে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমএনএ ও এমপিএ যারা পরবর্তীতে গণপরিষদের সদস্য হয়েছেন। চতুর্থ শ্রেণিতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, কলাকুশলী এবং দেশের ভেতর-বাইরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিকরা আছেন। পঞ্চম শ্রেণি হলো স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা।
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ২১ জন সদস্যের মধ্যে মোহাম্মদ জাকারিয়া পিন্টু, কাজী সালাহউদ্দিন, এনায়েতুর রহমান খান প্রমুখ ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে গণ্য হতেন। এখন থেকে তাঁরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা দেশের ভিতরে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন বা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন, এবং যাঁরা বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন, তাঁদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হবে। এছাড়া, পাকিস্তান ও তার সহযোগী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী বেসামরিক নাগরিক, সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ, মুক্তিবাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার ও স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন।
আপনার মতামত লিখুন