তেহরানে বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগী সরকার

ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থানরত প্রায় ৪০০ বাংলাদেশির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকার। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রায় একশ’ বাংলাদেশিকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে দূতাবাসের কর্মকর্তা, কূটনীতিক এবং তাদের পরিবার সদস্যদেরও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, ইরানে বর্তমানে দুই হাজারের বেশি বাংলাদেশি নাগরিক অবস্থান করছেন। যাদের নিয়ে সরকার সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন, তাদের অবস্থান তেহরানে। এই মুহূর্তে তেহরান থেকে দূরে নিরাপদ এলাকায় স্থানান্তরের কাজ চলছে। বিমান চলাচল বন্ধ এবং স্থলপথ নিরাপদ না থাকায় আপাতত ইরান ত্যাগের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রবাসীদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রাখার অস্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরবর্তীতে কেউ পাকিস্তান বা তুরস্কে যেতে চাইলে সরকার তাদের সহযোগিতা করবে।
রুহুল আলম আরও জানান, তেহরানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের চ্যান্সারি ভবন ও রাষ্ট্রদূতের বাসভবনও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। রাষ্ট্রদূত ইতোমধ্যে নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন। দূতাবাস কর্মীরা যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন এবং একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে, যা থেকে প্রবাসীদের আপডেট জানানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূতসহ প্রায় ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবার রয়েছেন। রেডিও তেহরানে ৮ জন বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারসহ ২৭ জন, শিক্ষার্থী ১০–১২ জন এবং পেশাজীবী রয়েছেন প্রায় ১০ জন। এছাড়া গত ১৩ জুন দেশে ফেরার কথা থাকলেও ২৮ জন বিমান চলাচল বন্ধ হওয়ায় আটকা পড়েছেন। তেহরানে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি অবস্থান করছেন এবং বাকি বাংলাদেশিরা ইরানের বিভিন্ন শহরে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন, যাদের মধ্যে কেউ কেউ বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থান করছেন। অনেকে মাছ ধরাসহ ছোটখাটো পেশায় নিয়োজিত। কিছু বাংলাদেশি রয়েছেন ডিটেনশন সেন্টারে এবং কেউ কেউ রয়েছেন মানব পাচারের ট্রানজিট প্রক্রিয়ায়।
যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রভাব নিয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এই সংঘাত বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধের মতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতাও আমাদের অর্থনীতির ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে প্রবাসীরা কর্ম হারাতে পারেন এবং ভবিষ্যতে তাদের সেখানে অবস্থান করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। এ অবস্থায় তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, যত দ্রুত সম্ভব এই সংঘাত বন্ধ করে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হোক।
তেহরানে বাংলাদেশিদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের জন্য দূতাবাসের অর্থ ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে ব্যাংকিং চ্যানেল কাজ না করায় অতিরিক্ত অর্থ পাঠানো জটিল হয়ে পড়েছে। সরকার বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র এবং ইরান সরকারের সহায়তায় অর্থ পাঠানোর উপায় খুঁজছে। রুহুল আলম জানান, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সবকিছু সহজে হয় না, তবে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যেন বাংলাদেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সহায়তা নিশ্চিত করা যায়।
আপনার মতামত লিখুন