যুক্তরাজ্যে ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ নিষিদ্ধ ঘোষণা: টিউলিপ সিদ্দিকসহ এমপিদের সমর্থনে বিতর্ক

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: সোমবার, ৭ জুলাই, ২০২৫, ৬:১৪ অপরাহ্ণ
যুক্তরাজ্যে ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ নিষিদ্ধ ঘোষণা: টিউলিপ সিদ্দিকসহ এমপিদের সমর্থনে বিতর্ক

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্যালেস্টাইনপন্থী আন্দোলন সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকসহ বেশিরভাগ সংসদ সদস্য। গত ২ জুলাই অনুষ্ঠিত এই ভোটাভুটিতে ৩৮৫ জন এমপি নিষেধাজ্ঞার পক্ষে এবং মাত্র ২৬ জন এর বিপক্ষে ভোট দেন। গাজায় ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের প্রতিবাদে সংগঠনের বিভিন্ন তৎপরতা, বিশেষ করে সামরিক ঘাঁটিতে হামলা ও প্রতীকী বিক্ষোভের ঘটনার পরই ব্রিটিশ সরকার এই কঠোর পদক্ষেপ নেয়।

সংগঠনটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রেক্ষাপটে গত মাসে ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর কিছু কর্মী ব্রিটেনের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ঢুকে দুটি সামরিক বিমানে লাল রঙ ছিটিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। এরপরই সরকার সংগঠনটিকে সন্ত্রাসী হিসেবে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে সংগঠনটির সদস্য হওয়া, সমর্থন করা কিংবা তাদের জন্য তহবিল সংগ্রহ এখন থেকে আইনের চোখে সন্ত্রাসবাদের শামিল বলে গণ্য হবে। এমনকি সংগঠনটির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করাও এখন আইনি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে, যেটা সাধারণত আইএস কিংবা আল-কায়েদার মতো গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায়।

তবে এই সিদ্ধান্ত ঘিরে তীব্র সমালোচনা করেছেন বিভিন্ন মানবাধিকারকর্মী ও আইনপ্রণেতারা। স্বতন্ত্র এমপি জারা সুলতানা মন্তব্য করেন, একটি স্প্রে ক্যানের প্রতিবাদ আর আত্মঘাতী হামলার মধ্যে তুলনা টানা শুধু হাস্যকর নয়, বরং তা নৈতিকভাবে বিকৃত। তিনি এই সিদ্ধান্তকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হুমকি হিসেবে অভিহিত করেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের যুক্তরাজ্য প্রধান সাশা দেশমুখও একে নজিরবিহীন ও অতিরিক্ত আইনি ক্ষমতার ব্যবহার বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত সরকারের হাতে এমন ক্ষমতা দিচ্ছে যা মতপ্রকাশ দমন, নজরদারি বৃদ্ধি এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তারের পথ সহজ করে দেবে।

গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে ব্যাপক ফিলিস্তিনি প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ চলছে। যুক্তরাজ্যেও একাধিক সংগঠন এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম প্যালেস্টাইন অ্যাকশন। তবে সংগঠনটির পদ্ধতি নিয়ে দেশটিতে মতবিরোধ রয়েছে— কেউ তাদের সাহসী ও প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ তাদের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এই সিদ্ধান্ত দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভক্তি আরও বাড়াবে এবং গাজা সংকট নিয়ে সরকারের ভূমিকা আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে।