গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের গাড়িবহরে হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালো

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫, ৪:৩২ অপরাহ্ণ
গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের গাড়িবহরে হামলা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালো

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহরে গত বুধবার দুপুরে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। লঞ্চঘাট এলাকায় পুলিশের বাধার কারণে শুরু হওয়া সংঘর্ষ এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত চলছিল। সমাবেশ শেষে মাদারীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া এনসিপির গাড়িবহর সড়ক অবরোধ করে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। ঘটনাস্থলের সঙ্গে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণ অধিকার পরিষদ, আপ বাংলাদেশসহ কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলও অবস্থান নেন এবং হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতির সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “দুষ্কৃতিকারীদের কঠোর হাতে দমন ছাড়া বিকল্প নেই। পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের এই সন্ত্রাসী হামলা ন্যাক্কারজনক।” তিনি আরও বলেন, দেশের গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার রক্ষায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, এনসিপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে, যা গভীর উদ্বেগের বিষয়। তিনি বলেন, “যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রশাসনের দায়িত্ব, কিন্তু গোপালগঞ্জে তা দেখা যায়নি।” তিনি গোপালগঞ্জসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন। তিনি উল্লেখ করেন, দেশের ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন এখনো মুক্ত হয়নি, তাই সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে জোরদার পদক্ষেপ জরুরি।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম যৌথ বিবৃতিতে বলেন, গোপালগঞ্জে সংঘটিত হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। তারা স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর কার্যকর ভূমিকার অভাবকে উদ্বেগজনক হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং হামলার তীব্র নিন্দা জানান।

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারা দেশে গোপালগঞ্জ হামলার প্রতিবাদে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ব্লকেড কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়। সংগঠনটির আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, “রাজ্যে পুলিশ সংস্কার হয়নি, গোপালগঞ্জ এখনও ফ্যাসিবাদের ঘাঁটি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসন ব্যর্থ এবং রাজনীতিতে সংস্কারের অভাব রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানকে পূর্ণ বিপ্লবে রূপ দিতে হবে।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির অঙ্গসংগঠন জাতীয় যুবশক্তি গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, নিষিদ্ধ দলের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা দিনের আলোয় প্রকাশ্যে হামলা চালিয়ে গণতন্ত্র ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করছে। তারা দাবি করে, মুজিববাদের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্ত সন্ত্রাসীরা আগ্রাসী হয়ে উঠেছে এবং তারা এখনো ন্যূনতম অনুশোচনাবোধ দেখাচ্ছে না। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট লীগের বিরুদ্ধে আর কোন ছাড় দেওয়া হবে না, ফ্যাসিস্টদের নির্মূল করতে হবে। নুরুল হক নুর প্রশাসনের প্রতি সতর্ক করে বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি গোপালগঞ্জকে সন্ত্রাসী লীগের হাত থেকে মুক্ত করার দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তাহলে তারা ‘ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ মার্চ’ করবে। তিনি গোপালগঞ্জবাসীর প্রতি আহ্বান জানান, ফ্যাসিবাদ নির্মূলে সক্রিয় হোন, পুরো বাংলাদেশ আপনার পাশে থাকবে।