কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে গায়েবানা ও বিক্ষোভ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৫ অপরাহ্ণ
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে গায়েবানা ও বিক্ষোভ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

২০২৪ সালের ১৭ জুলাই (বুধবার) সারাদেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের মাগফেরাত কামনায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গায়েবানা জানাজা আদায় করেন আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের তাড়িয়ে দিয়ে ক্যাম্পাস ‘রাজনীতিমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়। এর পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল খালি করার নির্দেশ দেয়। একইদিন সরকার দেশের বেশ কিছু এলাকায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সরকারি ছুটির দিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, কফিন মিছিল ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাজধানীর হানিফ উড়াল সড়কের টোল প্লাজায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়, যেখানে রাত পর্যন্ত অন্তত ২০টি স্থানে আগুন লেগে থাকে।

গত ১৬ জুলাই ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ অন্তত ছয়জন নিহত হন। নিহতদের স্মরণে ১৭ জুলাই ঢাকায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসভবনের সামনে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার শেষে শিক্ষার্থীরা প্রতীকী কফিন নিয়ে শপথ করে, ‘এই আন্দোলন বৃথা যেতে দেব না।’

পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আন্দোলনকারীরা টিএসসি অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাদের বাধা দেয়। আন্দোলন সমন্বয়ক সারজিস আলম জানান, পুলিশ ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রবেশ পথে শিক্ষার্থীদের আটকে রেখেছে এবং টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করেছে।

অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গায়েবানা জানাজায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাধা দেয় এবং কোথাও হামলাও চালায়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) সকল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে ক্যাম্পাস ও আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। অনেক শিক্ষার্থী হল ছাড়লেও অনেকেই রাতেও ক্যাম্পাসে অবস্থান করে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হল না ছাড়লে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

অন্যদিকে, ১৬ জুলাই রাতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রদের হামলার ঘটনা ঘটে, যেখানে ছাত্রলীগের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। শিক্ষার্থীরা ১৪টি হলে ‘ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ’ অঙ্গীকারনামায় প্রাধ্যক্ষদের স্বাক্ষর আদায় করেন।

১৮ জুলাই সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই কর্মসূচিতে হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ রাখার আহ্বান দেওয়া হয়।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণে আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন এবং বিশ্বাস ব্যক্ত করেন সর্বোচ্চ আদালত থেকে ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে চলে গেছে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের অস্তিত্বের ওপর হামলা ও হুমকি এসেছে, মোকাবিলা করতে হবে,’ এবং দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন।

রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের গ্রামের বাড়িতে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। একই দিনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো রাজধানীর জাতীয় মসজিদে গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে, যেখানে পুলিশ বাধা দেয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সময় সরকারকে সমালোচনা করেন।

চট্টগ্রামেও কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে গায়েবানা জানাজা ও বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। দেশের অন্তত দশটি স্থানে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ এবং দুই জায়গায় রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ চালায়।