সিম ব্যবস্থাপনায় নতুন নিয়ম: সর্বোচ্চ ১০টি সিমের সীমা নির্ধারণ

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সিম ব্যবস্থাপনায় একটি নতুন নিয়ম চালু করেছে, যার ফলে এখন থেকে একজন ব্যবহারকারী সর্বোচ্চ ১০টি সিম ব্যবহার করতে পারবেন। যাঁদের নামে ১০টির বেশি সিম নিবন্ধিত রয়েছে, তাঁদের সেগুলোর সংখ্যা কমিয়ে আনার সুযোগ দেওয়া হবে। এরপর ধাপে ধাপে অতিরিক্ত সিমগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। পুরো প্রক্রিয়া আগামী নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিটিআরসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা, অপারেটরদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও আন্তর্জাতিক চর্চার দৃষ্টিকোণ থেকে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন দিয়েছে এবং বিটিআরসির ২৯৬তম কমিশন সভায় পুরো পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়েছে। এই নিয়ম কার্যকর হলে প্রায় ২৬ লাখ ব্যবহারকারীর ৬৭ লাখ সিম বন্ধ হয়ে যাবে।
বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত প্রকৃত সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৭৫ লাখেরও বেশি। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ৮০ শতাংশের বেশি ব্যবহারকারীর নামে ৫টি বা তার কম সিম রয়েছে। ৬ থেকে ১০টি সিম রয়েছে ১৬ শতাংশের বেশি ব্যবহারকারীর কাছে। তবে ১০টির বেশি সিম রয়েছে মাত্র ৩ শতাংশের মতো ব্যবহারকারীর নামে। তাদেরকেই এ নিয়মে বেশি প্রভাবিত করবে।
ব্যবহারকারীদের ভোগান্তি এড়াতে বিটিআরসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ১ আগস্ট থেকে তিন মাস সময় দেওয়া হবে যাতে নিজ উদ্যোগে বাড়তি সিম বাতিল করা যায়। এরপর ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল অপারেটরদের সহযোগিতায় অবশিষ্ট অতিরিক্ত সিমগুলো বন্ধ করা হবে। যেসব ব্যবহারকারীর নামে ১০টির বেশি সিম রয়েছে, তাঁদের একটি তালিকা প্রস্তুত করবে বিটিআরসির নিয়োগ করা সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্মের ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান। এরপর এই তালিকা অপারেটরদের দেওয়া হবে, যাতে তারা সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করে অতিরিক্ত সিম বাতিল করতে অনুরোধ জানাতে পারে।
অপারেটররা এসএমএস ও ওয়েবসাইট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গ্রাহকদের জানাবে এবং তাদের ওয়েবসাইটে ১০টির বেশি সিমধারী ব্যবহারকারীদের নামের তালিকা প্রকাশ করবে। ব্যবহারকারীরা *১৬০০১# নম্বরে ডায়াল করে জানতে পারবেন, তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে কতটি সিম নিবন্ধিত আছে। অতিরিক্ত সিম থাকলে ‘ট্রান্সফার অব ওনারশিপ’ সুবিধার মাধ্যমে অন্যের নামে স্থানান্তর করার সুযোগও থাকবে।
যেসব ব্যবহারকারী নিজ উদ্যোগে সিমের সংখ্যা কমাবেন না, তাঁদের তালিকা তৈরি করে অপারেটরদের জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর সর্বশেষ ছয় মাসে যে সিমগুলো সবচেয়ে বেশি রাজস্ব এনে দিয়েছে, সেগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে ১০টি সিম নির্ধারণ করা হবে। এভাবে প্রতিটি অপারেটরের অন্তত একটি করে সিম ব্যবহারকারীর জন্য রাখার চেষ্টা করা হবে এবং এমএফএস বা জরুরি সেবাসংশ্লিষ্ট সিমগুলোকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।
চূড়ান্তভাবে ব্যবহারকারীর ১০টি সিম চিহ্নিত হয়ে গেলে অবশিষ্ট সিমগুলো বন্ধ করার জন্য অপারেটরদের নির্দেশ দেওয়া হবে। তবে যদি কোনো ব্যবহারকারীর প্রয়োজনীয় সিম ভুলক্রমে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তিনি অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা পুনরায় নিবন্ধন করতে পারবেন।
বিটিআরসি আশা করছে, সঠিক পরিকল্পনা ও সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়া নভেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন হবে এবং এতে করে দেশের সিম ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
আপনার মতামত লিখুন