গণঅভ্যুত্থানের শহীদ বোরহান: পরিবারের শোক, বিচার ও স্বীকৃতির দাবি

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৫:১৭ অপরাহ্ণ
গণঅভ্যুত্থানের শহীদ বোরহান: পরিবারের শোক, বিচার ও স্বীকৃতির দাবি

ফেনীর সোনাগাজীর আবদুল গণি বোরহান (৩২) গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট রাজধানীর বাংলামোটরে ছাত্র-জনতার মিছিলে অংশ নেওয়ার সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বোরহান ছিলেন পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয়। কুমিল্লা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করার পর তিনি সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে চাকরি নেন। ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের আয়েশা আক্তারকে বিয়ে করেন, যিনি সোনাগাজী ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার ফাজিল (ডিগ্রি) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের পরিকল্পনা ছিল ২০২৫ সালে আয়েশাকে রাজধানীতে নিয়ে যাওয়ার, কিন্তু সেই স্বপ্ন চিরতরে ভেঙে যায় তার শহীদ হওয়ার মধ্য দিয়ে।

বোরহানের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার বড় ভাই মহসিন হাসপাতালে ছুটে যান, আর আয়েশা তখন বাবার বাড়িতে ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন আয়েশা বলেন, “বছর না পেরোতেই আমার সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেলো। বোরহানের মা-বাবাও নেই, এখন আমার ঠিকানা বাবার বাড়ি।”

৫ আগস্ট রাতে বোরহানের নিথর দেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায় এবং রাত ৯টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। যখন দেশজুড়ে বিজয়ের উল্লাস চলছিল, তখন বোরহানের বাড়িতে শোকের মাতম নেমে আসে। পরিবারের সদস্যরা জানান, বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন তারা। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকেও অনুদান এসেছে, তবে তারা শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, শহীদদের স্মৃতি অমলিন রাখতে সরকারি উদ্যোগের দাবি জানিয়েছেন।

বোরহানের বড় ভাই আমানত উল্যাহ বলেন, “এক সপ্তাহ আগেও ভাই বাড়িতে ছিলেন, আর এখন ফিরলেন কফিনবন্দী হয়ে।” তিনি জানান, হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে দেরি হওয়ায় মামলা দায়েরে বিলম্ব হচ্ছে, তবে দ্রুতই তারা মামলা করবেন।

স্থানীয়রা শহীদ বোরহানের স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন। তারা সোনাগাজী ছাবের পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নাম বোরহানের নামে করার প্রস্তাব দিয়েছেন। পাশাপাশি, সোনাগাজী পৌর শহরের জিরোপয়েন্টকে ‘বোরহান চত্বর’ নামকরণেরও আহ্বান জানিয়েছেন। পরিবার ও স্থানীয়দের একমাত্র দাবি, বোরহানসহ সব শহীদের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।