মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ হওয়ায় বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮:৫৩ অপরাহ্ণ
মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ হওয়ায় বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) বন্ধের ঘোষণা নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এই সিদ্ধান্তের কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য কর্মসূচিগুলির জন্য বিপদ সৃষ্টি হতে পারে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইউএসএআইডির বিশাল কর্মীসংখ্যা কমানোর পাশাপাশি, বৈদেশিক সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ৯০ দিন বৈদেশিক সহায়তার অর্থায়ন বন্ধ থাকবে এবং এই সময়ের মধ্যে পর্যালোচনা করা হবে যে, এই সহায়তা ট্রাম্প প্রশাসনের অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা।

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক ব্যয়ের সমালোচনা করে আসছেন এবং তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে এটি সামঞ্জস্য করার কথা বলেছেন। বিশেষ করে ইউএসএআইডি’কে লক্ষ্যবস্তু করে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা সংস্থাটির ব্যয়কে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে এবং কিছু প্রকল্পকে ‘করদাতাদের অর্থের অপচয়’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন যে, ইউএসএআইডি বন্ধের ফলে সংক্রামক রোগের বিস্তার, টিকা ও চিকিৎসা গবেষণায় বিলম্ব হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ইউএসএআইডি অপুষ্টি, স্বাস্থ্যবিধি, টয়লেট সুবিধা এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে সহায়তা প্রদান করে, যা টিবি এবং ডায়রিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, ইউএসএআইডি’র সহায়তা বন্ধ হলে এসব রোগের বিস্তার বেড়ে যেতে পারে।

ড. টম উইংফিল্ড মন্তব্য করেছেন যে, ‘রোগের বিস্তার কোনো সীমান্ত মানে না। জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থানান্তরের কারণে সংক্রামক রোগ আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।’ এছাড়া, এই সিদ্ধান্তের ফলে HIV ও টিবি রোগীদের চিকিৎসা সেবা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

‘ফ্রন্টলাইন এইডস’ নামক একটি সংস্থা জানায়, তাদের ৬০টিরও বেশি অংশীদারি সংস্থা ইউএসএআইডি’র সহায়তা বন্ধ হওয়ার কারণে কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে এবং কর্মীদের বরখাস্ত করা হয়েছে। এসব সংস্থাগুলোর মধ্যে HIV পরীক্ষা, টিবি চিকিৎসা এবং কনডম সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা বন্ধ হতে চলেছে।

এছাড়া, ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে পরিচালিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রকল্প, বিশেষ করে ম্যালেরিয়া এবং HIV সম্পর্কিত গবেষণা বিলম্বিত বা বাতিল হতে পারে, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করবে।

বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে মহামারির ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে, যেমন কলেরা ও ম্যালেরিয়া।