ট্রাম্পের ‘প্রতিক্রিয়া শুল্ক’ এবং বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থায় বিশাল পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছেন। ২০২৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি, তিনি জানিয়েছেন যে আমেরিকার বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর ‘পাল্টা শুল্ক’ আরোপ করবেন। তার ভাষ্যমতে, ‘যে দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর যে হারে শুল্ক আরোপ করে, আমরাও তাদের ওপর একই হারে শুল্ক আরোপ করব।’
এটি একটি নতুন অর্থনৈতিক সুরক্ষাবাদী নীতির সূচনা, যা বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও মূল লক্ষ্য চীন, তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, মেক্সিকো সহ অন্যান্য বড় দেশগুলোও এর আওতায় আসতে পারে।
বিশ্ববাজার ইতোমধ্যে এই ঘোষণার প্রভাব অনুভব করছে, যেখানে শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে এবং বিশ্ব বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই নতুন শুল্কনীতি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য বিরোধ বাড়াবে এবং পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করবে, যা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলবে।
বাংলাদেশও এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। ২০২৩ সালে, ৪৮টি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল, যার মধ্যে চীন শীর্ষে ছিল। মেক্সিকো, ভিয়েতনাম, এবং ভারতও অনেক বড় বাণিজ্য ঘাটতির দেশ ছিল। বাংলাদেশেরও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য ঘাটতি ছিল। যদিও এটি বড় অর্থনীতির তুলনায় ছোট, তবে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে আমাদের রপ্তানির উপর এর সম্ভাব্য প্রভাব।
বাংলাদেশ এবং কম্বোডিয়া এই ৪৮টি দেশের মধ্যে একমাত্র স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে রয়েছে। কম্বোডিয়া ইতিমধ্যে কিছু মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে এবং মার্কিন বাজারে তার বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। বাংলাদেশেও একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে, যা দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাত।
বাংলাদেশের সরকারকে অবশ্যই ব্যবসায়ী সংগঠন, শিল্পমালিক ও রপ্তানিমুখী খাতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে, যাতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বজায় রাখা যায় এবং নতুন বাজার অনুসন্ধান করা যায়। নীতি সংস্কার এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের বাণিজ্য সুবিধা রক্ষা করা জরুরি। বিশেষভাবে, দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় বাণিজ্য আলোচনা জোরদার করতে হবে, যাতে মার্কিন নীতির নেতিবাচক প্রভাব কমানো যায়।
এছাড়া, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য নতুন কৌশল গ্রহণ করা জরুরি। কর কাঠামো, বাণিজ্য অবকাঠামো উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো উচিত।
আপনার মতামত লিখুন