যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সম্পর্কের টানাপোড়েন: খনিজ সম্পদ ও যুদ্ধের সমাধান নিয়ে বিতর্ক

হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আবার আলোচনায় বসতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে হবে, যাতে তারা ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে পারে। তবে, গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র যখন ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদের অংশীদারিত্ব দাবি করে, তখন জেলেনস্কি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এই বিষয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেন যদি চুক্তিতে সম্মত হয়, তবে রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে মার্কিন সহায়তার ওপর এর প্রতিফলন পড়বে। ট্রাম্পের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা আমেরিকার স্বার্থের বিরুদ্ধে, তাই তিনি সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত যুদ্ধের অবসান চান।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের এক ব্রিফিংয়ে মাইক ওয়াল্টজ জানান, ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ—যেমন লিথিয়াম, টাইটানিয়াম, কয়লা, গ্যাস, তেল ও ইউরেনিয়াম—বাজারমূল্যে কয়েক বিলিয়ন ডলারের সম্পদ, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি পরামর্শ দেন যে, ইউক্রেন যদি যুক্তরাষ্ট্রকে এই সম্পদে প্রবেশাধিকার দেয়, তাহলে তারা ইউক্রেনকে আরও সহায়তা দিতে পারে অথবা ইতোমধ্যে দেওয়া সহায়তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে এটি বিবেচিত হতে পারে।
তবে, জেলেনস্কি স্পষ্টভাবেই এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, তিনি তার রাষ্ট্রকে বিক্রি করতে পারেন না। কিয়েভে যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেনবিষয়ক প্রধান দূত কিথ কেলোগের সঙ্গে বৈঠকের পর জেলেনস্কি জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা চুক্তি করতে প্রস্তুত, যা ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করতে সাহায্য করবে।
এই ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। ট্রাম্প সম্প্রতি ইউক্রেনের নেতাকে ‘অনির্বাচিত একনায়ক’ বলে আক্রমণ করেছেন এবং দাবি করেছেন যে এই যুদ্ধের জন্য জেলেনস্কিই দায়ী। অন্যদিকে, জেলেনস্কি বলেছেন, ট্রাম্প মস্কোর তৈরি বিভ্রান্তিকর তথ্যের জগতে বসবাস করছেন।
এদিকে, সৌদি আরবে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যেখানে জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৈঠকের পর জানান, উভয় পক্ষই আলোচনার প্রাথমিক ধাপে সম্মত হয়েছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের সেই প্রস্তাব স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়নি, যেখানে রাশিয়াকে আগ্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
বর্তমানে, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক একটি জটিল মোড়ে রয়েছে, যেখানে একদিকে যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে আলোচনা চলছে, অন্যদিকে খনিজ সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক চলছে।
আপনার মতামত লিখুন