আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও জামিন ঠেকাতে পুলিশের বিশেষ তালিকা

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৪:৫৬ অপরাহ্ণ
আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও জামিন ঠেকাতে পুলিশের বিশেষ তালিকা

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের মামলার আসামি এবং গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীদের একটি বিশেষ তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) সদস্যরা এই তালিকা তৈরির কাজ করছেন। জানা গেছে, আইনি প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার এবং জামিন প্রতিরোধে কেন্দ্রীয়ভাবে এই তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তর, জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা ও পাবলিক প্রসিকিউটর সূত্রে জানা যায়, তালিকায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও মোবাইল ফোনের নম্বর অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আদালতে জামিন প্রতিরোধের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।

২০২৪ সালের ৬ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় সারা দেশে প্রায় ২১০০ মামলা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার আসামি রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের চিহ্নিত ২৫০টি গুরুত্বপূর্ণ মামলার অন্তত ৭২১ জন আসামি ইতোমধ্যে জামিন পেয়েছেন। বিভিন্ন জেলা ও মহানগরে জামিনপ্রাপ্তদের সংখ্যা বাড়ছে, তবে নতুন গ্রেপ্তারের হার তুলনামূলকভাবে কম।

এসপি ও মহানগর কমিশনারদের সতর্কতা বাড়ানোর পাশাপাশি সহিংসতায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। আসামিদের মামলার নম্বর, অভিযোগ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে সমন্বিত তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পাবলিক প্রসিকিউটরের সঙ্গে সমন্বয় করে জামিনের বিরোধিতা করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার আদালত সূত্রে জানা গেছে, জামিন পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন সাবেক হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান, সাবেক এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু, শেখ হাসিনার বান্ধবী সাবেক এমপি জোবেদা খাতুন পারুলসহ আরও অনেকে।

রাজশাহী রেঞ্জের এক জেলা পরিদর্শক (গোয়েন্দা) জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার বাড়ানো এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, শুরুর দিকে ব্যাপক গ্রেপ্তার হলেও এখন অনেকে আত্মগোপনে গেছেন বা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া অনেকে জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন, যা সরকারের উচ্চমহলের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মুখপাত্র) ইনামুল হক সাগর বলেন, “কোনো মামলার পর আসামিদের খোঁজ নেওয়া ও তালিকা তৈরি করা পুলিশের নিয়মমাফিক কাজ। এটি তারই অংশ হিসেবে করা হয়ে থাকতে পারে।”

ঢাকার আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী জানান, প্রতিটি মামলার আসামিদের জামিনের বিরোধিতা করা হচ্ছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে বয়স, অসুস্থতা, তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন ও রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে জামিনের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, অনেক সময় তদন্ত কর্মকর্তারা আসামিদের সঙ্গে সমঝোতা করে জামিন সহায়ক প্রতিবেদন জমা দেন।

পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আইনি প্রক্রিয়ার ফাঁকফোকর ও অনিয়ম রোধে গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর আসামিদের গ্রেপ্তার ও জামিন পরিস্থিতির ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। এই তালিকা সেই কার্যক্রমেরই অংশ।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ও অপরাধবিষয়ক গবেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, “আসামিদের জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে দেখতে হবে, তারা কোন ধরনের মামলায় জামিন পাচ্ছেন এবং কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে কি না।”