তরুণদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল: পরিবারতন্ত্রের ইতি ও গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের অঙ্গীকার

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১:৫০ অপরাহ্ণ
তরুণদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল: পরিবারতন্ত্রের ইতি ও গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের অঙ্গীকার

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তরুণদের নেতৃত্বে একটি নতুন দল গঠনের প্রস্তুতি চলছে, যেখানে পরিবারতন্ত্রের কোনো স্থান থাকবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “বাপ নেতা হলে ছেলে নেতা হবে—এই ধারা আর থাকবে না। যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে, এবং যদি কেউ প্রকৃত যোগ্য হন, তাহলে আমরা তাকে চেয়ার ছেড়ে দিতে বাধ্য হবো।”

শনিবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভাটি ‘সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজন করা হয়, যেখানে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ও সৈনিকেরা বক্তব্য দেন।

সভায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জাতীয় নাগরিক কমিটির রাজনীতিতে নিজেদের সম্পৃক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন এবং এই দলে ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের আশ্বাস দেন। তাদের স্বাগত জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, “নতুন বাংলাদেশের, নতুন চিন্তাধারার রাজনীতির কথা ছড়িয়ে দিন। আপনাদের দায়িত্ব নিতে হবে। ভোটের রাজনীতিতে আসুন, যাতে এই রাজনীতি সত্যিকারের জনগণের রাজনীতি হয়। আপনারা চেয়ারম্যান, মেয়র, কাউন্সিলর বা এমপি-মন্ত্রী হয়ে উঠুন।”

এসময় তিনি দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তার ভাষায়, “খুনি শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন, কিন্তু তার ১৬ বছরের শাসনে গড়ে ওঠা যে সিস্টেম, তা এখনও টিকে আছে। অতীতের রাজনৈতিক শক্তিগুলো এই সিস্টেম বজায় রাখতে চায়, কিন্তু আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করতে হবে।”

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তরুণদের গণতান্ত্রিক রাজনীতি বাধাগ্রস্ত হলে সশস্ত্র বিপ্লবের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, শেখ হাসিনার পতনের আগে তারা সশস্ত্র বিপ্লবের ঘোষণা দিয়েছিলেন, এবং সেই ঘোষণা এখনো বহাল রয়েছে। যদি কোনো রাজনৈতিক দল বা বিদেশি শক্তি তরুণদের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে বাধা দেয়, তাহলে তারা বিকল্প পথ বেছে নিতে বাধ্য হবেন।

তিনি আরও বলেন, “এখন আর পুরোনো রাজনীতি চলবে না। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের উদ্দেশে বলছি—ক্যাম্পাসে অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনা যাচ্ছে, তাই ধীরে চলুন। নতুবা ছাত্রলীগের মতো পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে, এবং আমরা আপনাদের রক্ষা করতে পারবো না।”

তিনি সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন এবং গণপরিষদ গঠনের আহ্বান জানান, যা নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে। একইসঙ্গে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সভায় সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তরুণদের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার প্রতি জোর দেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) রুকন উদ্দিন ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেন, উল্লেখ করে যে, “অবৈধ অর্থ ছড়িয়ে পতিত ফ্যাসিবাদ ছাত্রনেতাদের বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।” অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ ক্যাপ্টেন খালেদ হোসাইন বলেন, “ভোটের মাধ্যমেই তরুণদের দল ক্ষমতায় আসবে,” এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর গোলাম হায়দার জানান, তিনি তরুণদের যে কোনো রাজনৈতিক উদ্যোগে পাশে থাকবেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন সারোয়ার তুষার, নিজাম উদ্দিন, মনিরা শারমীন, আতিক মুজাহিদ, হাফেজ আকরাম হোসাইন, আদিব আরিফসহ অনেকে। সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন তাসবির আহমেদ, মেহেদী হাসান, শুভ আফ্রিদি প্রমুখ।

বক্তারা দাবি করেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করা হয়েছে, ভারতীয় আধিপত্যবাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ধ্বংস করা হয়েছে। তারা বিশ্বাস করেন, তরুণরাই এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে এবং দেশকে একটি নতুন রাজনৈতিক ধারায় এগিয়ে নিতে সক্ষম হবে।