মার্কিন ত্রাণ তহবিল স্থগিতের প্রভাব রোহিঙ্গা শিবিরে পড়তে শুরু করেছে

মার্কিন সরকারের সাম্প্রতিক নির্বাহী আদেশে বিশ্বব্যাপী ত্রাণ তহবিল স্থগিতের ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ওপর ইতোমধ্যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) শরণার্থী বিষয়ক এক শীর্ষ কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শত শত বছর ধরে বসবাস করলেও ১৯৮০-এর দশকে নাগরিকত্ব হারানোর পর থেকে রোহিঙ্গাদের অনেকেই বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। ২০১৭ সালে সামরিক অভিযানের ফলে আরও সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘ একে জাতিগত নিধনের “পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ” হিসেবে উল্লেখ করেছে।
বর্তমানে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের ৩৩টি শিবিরে গাদাগাদি করে বসবাস করছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। এই শরণার্থীরা প্রায় সম্পূর্ণরূপে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে এই সহায়তা ক্রমাগত কমছে। যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা সংকটে সবচেয়ে বড় দাতা, যা গত বছর মোট বৈদেশিক সাহায্যের ৫৫ শতাংশ বা প্রায় ৩০ কোটি ১০ লাখ ডলার প্রদান করেছিল।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন জানুয়ারির শেষের দিকে বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ মার্কিন সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেয়, যা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, যুক্তরাষ্ট্র এই তহবিলের ৫০ শতাংশেরও বেশি প্রদান করে থাকায় স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও পুষ্টি খাত বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইতোমধ্যে শিবিরের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল তাদের সেবা সীমিত করেছে এবং টিকে থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। মার্চের মধ্যে নতুন অর্থায়নের ব্যবস্থা না হলে এসব হাসপাতাল বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
এদিকে, মিয়ানমারে নতুন করে সংঘাতের ফলে গত আগস্ট থেকেই আরও ৮০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য স্থানে সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রোহিঙ্গাদের জন্য বৈদেশিক সহায়তা কমছে, যা বাংলাদেশকে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি করছে। সেভ দ্য চিলড্রেন, ব্র্যাক ও ইউনিসেফের পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ইতোমধ্যে সংকটে পড়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের তহবিল কাটছাঁটের কারণে হাসপাতালগুলোর কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং কিছু সংস্থা কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে।
মিজানুর রহমান বলেন, যদি মার্কিন সহায়তা চূড়ান্তভাবে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে অন্যান্য দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সহায়তা আরও জোরদার করার চেষ্টা করা হবে। পাশাপাশি বিদ্যমান সম্পদের যৌক্তিক ব্যবহার করে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে তহবিল সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না হলে, এখানকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে এর চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন