গণতন্ত্র ঝুঁকিমুক্ত নয় যতক্ষণ না জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সরকার গঠিত হবে – তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, যতক্ষণ না জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সংসদ ও সরকার গঠিত হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত গণতন্ত্র নিরাপদ নয়। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সব ধর্ম, বর্ণের মানুষের জন্য নিরাপদ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি বিরাট সুযোগ। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়ে তারেক রহমান বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ‘কংসরূপী নৃশংস গণহত্যাকারী স্বৈরাচার’ বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তবে স্বৈরাচার পালালেও গণতন্ত্র এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে, আর পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা নানা কৌশলে পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে।
তিনি বলেন, সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু একটি দেশের জনসংখ্যার চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণের জন্য একটি শব্দমাত্র, এর বেশি কিছু নয়। বাংলাদেশে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে, বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী কিংবা সংশয়বাদী—সকল নাগরিকের পরিচয় একটাই, তারা বাংলাদেশি। এই বাংলাদেশ সবার, তাই সকল নাগরিক সমঅধিকার ভোগ করবে—এটাই বিএনপির নীতি, এটাই বিএনপির রাজনীতি।
সনাতনী সম্প্রদায়ের উদ্দেশে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান বলেন, গত দেড় দশকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, তাদের ধর্মীয় স্থাপনা ও বসতবাড়িতে যেসব হামলা হয়েছে, তার বেশিরভাগই ধর্মীয় কারণে হয়নি। বরং এসব ঘটনার পেছনে ছিল অবৈধ লোভ-লাভের জন্য দুর্বলের ওপর সবলের হামলা কিংবা অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। তিনি আহ্বান জানান, যেন ভবিষ্যতে ধর্মীয় পরিচয়কে কেউ হীন স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে।
তিনি আরও বলেন, গত ১৭ বছর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এখন যদি তারা সত্যিকার অর্থে এটি উপলব্ধি করতে পারেন, তাহলে তা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। এই উপলব্ধি মানবিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র ও সমাজে নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত করতে কোনো দলীয় পরিচয়ে আবদ্ধ থাকা জরুরি নয়। কেবল সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু পরিচয়ে রাষ্ট্র ও সমাজে কারো নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না। পলাতক স্বৈরাচারের শাসনামলে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর আয়নাঘরের নির্জন অন্ধকারে মৃত্যুভয়ে দিন কাটাতে হয়েছে, অথচ তারা সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন।
তিনি বলেন, “একটি রাষ্ট্র ও সমাজে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন আছে কিনা সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি রাষ্ট্রে আইনের শাসন না থাকে, তাহলে আমরা কেউ নিরাপদ নই। সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তার জন্য আইনের শাসনের বিকল্প নেই। একমাত্র আইনের শাসনই যেকোনো মানুষের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারে।”
চট্টগ্রাম নগরীর জে এম সেন হল মাঠে আয়োজিত জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন প্রদীপ চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। সম্মেলনে জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন মঠ-মন্দিরের সাধু-সন্ন্যাসীরাও উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন