জাতীয় রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক: হাসনাত আব্দুল্লাহর ‘ফুল স্টপ’ মন্তব্য

জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করেছেন, যা রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বুধবার (১২ মার্চ) রাতে তিনি সাদিকুর রহমান খানের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস শেয়ার করে শুধুমাত্র ‘ফুল স্টপ’ লিখে প্রতিক্রিয়া জানান।
সাদিকুর রহমানের স্ট্যাটাসে উল্লেখ করা হয়েছে, শাহবাগ আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্তভাবে গড়ে ওঠেনি, বরং পরিকল্পিতভাবে সক্রিয় করা হয়েছে। তার মতে, ভারতের দিল্লি থেকে এমন একটি পরিকল্পনা এসেছে, যেখানে আওয়ামী লীগকে নিয়েই পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের রূপরেখা নির্ধারিত হয়েছে। এই পরিকল্পনায় বিশেষ কয়েকটি শক্তি সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, যেখানে ‘ভালো’ আওয়ামী লীগ নেতাদের সাময়িকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে। এরপর আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশ কিংবা হরতালে আর কোনো বাধা থাকবে না। একে একে দলের নির্বাসিত নেতারাও দেশে ফিরে আসবেন, এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নির্দিষ্ট সময় পর একাধিক নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হবে, যেমনটা ২০০৮ সালে হয়েছিল।
এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে জনগণকেই সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাদিকুর রহমান। তিনি মনে করেন, অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস কিংবা অন্য কেউ এই প্রক্রিয়া রুখতে পারবেন না, তবে জনগণের ক্ষমতা রয়েছে এটি প্রতিহত করার। তিনি জিয়াউর রহমানের উদারতার প্রসঙ্গ টেনে উল্লেখ করেন, যেভাবে তিনি আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরে আসার সুযোগ দিয়েছিলেন, যার চূড়ান্ত পরিণতি তাকে নিজের জীবন দিয়ে দিতে হয়েছিল।
তার ভাষায়, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে সেনা কর্মকর্তাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল, আর এবার যদি আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসে, তাহলে বিরোধীদের হত্যা করা হবে। তাই জনগণকে এখনই সচেতন হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, অন্যথায় তাদের মৃত্যুপরোয়ানা জারি হয়ে যাবে।
স্ট্যাটাসে আরও বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগকে বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ করা উচিত এবং দলটির নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ থাকা উচিত নয়। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোও এখন পর্যন্ত এই ষড়যন্ত্রে সাড়া দেয়নি এবং তারা চায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হোক।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, নির্বাচন জুন, জুলাই বা ডিসেম্বর—যখনই হোক, তাতে আপত্তি নেই, তবে আওয়ামী লীগ বা নৌকা প্রতীক কোনোভাবেই নির্বাচনে থাকতে পারবে না। যারা এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করবে কিংবা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে, তাদের জাতীয় শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। প্রয়োজনে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে, তবে আওয়ামী লীগের পুনরাবৃত্তির কোনো ঝুঁকি নেওয়া হবে না।
সাদিকুর রহমান ইউরোপে নাৎসি নিষিদ্ধকরণের উদাহরণ টেনে বলেন, বাংলাদেশেও ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। কোনোভাবেই ‘ভালো আওয়ামী লীগ’ এবং ‘খারাপ আওয়ামী লীগ’ আলাদা করে দেখা যাবে না। যারা দলটিকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে বা ‘সমন্বিত নির্বাচন’ চাইবে, তাদেরও কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। তিনি তার বক্তব্যের শেষাংশে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যেভাবে অতীতে কিছু নেতাকে রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে হয়েছে, এবারও তেমন পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন