সিরাজগঞ্জের তাঁতশিল্পে ঈদের ব্যস্ততা: ভারতেও বাড়ছে চাহিদা

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫, ১১:৩৫ অপরাহ্ণ
সিরাজগঞ্জের তাঁতশিল্পে ঈদের ব্যস্ততা: ভারতেও বাড়ছে চাহিদা

সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ব্যাপক কর্মব্যস্ততা চলছে। জেলার তাঁতি ও শ্রমিকরা দিন-রাত শাড়ি, লুঙ্গি, ধুতি ও গামছা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চাহিদার কারণে জেলার পাইকারি হাটগুলোতেও বেচাকেনা এখন তুঙ্গে। শুল্কমুক্ত কোটায় তাঁতবস্ত্র রপ্তানির সুবিধায় এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এ মৌসুমে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার তাঁতবস্ত্র বাজারজাত হবে, যার ৬০ শতাংশই রপ্তানি হচ্ছে ভারতে।

সারা বছর মানুষের বস্ত্র চাহিদা মেটাতে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালী, এনায়েতপুর, উল্লাপাড়া, সদর ও কামারখন্দ উপজেলার প্রায় ১৫ হাজার কারখানায় ৪ লাখেরও বেশি তাঁতে ২০ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করছেন। বিশেষত, ঈদুল ফিতর ও পূজার মৌসুমে তাঁতিরা অধিক পরিশ্রম করে থাকেন। আগে যেখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁত চালু থাকত, এখন তা ভোর থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত চলছে।

এনায়েতপুর থানার খামারগ্রামের জাতীয় কারুশিল্প পদকপ্রাপ্ত তাঁতি আফজাল হোসেন লাভলুর কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা জানান, ভারতের ব্যাপারীদের কাছ থেকে প্রচুর অর্ডার আসছে। তাই তাঁতশ্রমিকদের বিরামহীন কাজ করতে হচ্ছে। তবে কাজ বেশি হলে ঈদ বোনাস ও অতিরিক্ত মজুরির সুযোগ থাকায় তারা আনন্দের সঙ্গে কাজ করছেন।

এদিকে, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর, সোহাগপুর ও শাহজাদপুরের পাইকারি বাজারগুলোতেও ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে। এখানকার সুতি, জামদানি, সিল্ক, গাদোয়াল, ইকট ও বুটিক শাড়ি ৫০০ থেকে ২,৫০০ টাকায় এবং লুঙ্গি ২০০ থেকে ১,৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বেচাকেনা বাড়লেও লাভের হার খুব বেশি বাড়েনি।

ভারতের বাজারেও সিরাজগঞ্জের তাঁতশাড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, বিশেষত কলকাতা ও আসামের মতো রাজ্যগুলোতে। কলকাতার শীর্ষ আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা সিরাজগঞ্জের শাড়িকে ভারতের তুলনায় সেরা মানের এবং তুলনামূলক সাশ্রয়ী বলে উল্লেখ করেছেন। ফলে, ভারতের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা এখানকার তাঁতবস্ত্র আমদানি করে সমগ্র ভারতবর্ষে সরবরাহ করছেন।

শীর্ষ রপ্তানিকারক এনায়েতপুরের খামারগ্রামের আলহাজ আফজাল হোসেন লাভলু জানান, প্রতিদিন সিরাজগঞ্জে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার তাঁতবস্ত্র উৎপাদিত হয়। দুই মাসের ঈদ মৌসুমে এই পরিমাণ দাঁড়াবে ৯,০০০ কোটি টাকায়। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই রপ্তানি হচ্ছে ভারতে।

সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন ও সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান বাচ্চু জানান, সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশ্ব দরবারেও এখন সিরাজগঞ্জের তাঁতের নাম সমাদৃত হচ্ছে।