যুক্তরাষ্ট্র: ইতিহাসের সবচেয়ে যুদ্ধপ্রেমী দেশ?

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫, ৯:২১ পূর্বাহ্ণ
যুক্তরাষ্ট্র: ইতিহাসের সবচেয়ে যুদ্ধপ্রেমী দেশ?

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার একবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে বলেছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে যুদ্ধপ্রেমী দেশ।” ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই মন্তব্য পুরোপুরি ভিত্তিহীন নয়। যুক্তরাষ্ট্র তার ২৪৮ বছরের ইতিহাসে ২৩২ বছর কোনো না কোনো যুদ্ধ বা সামরিক হস্তক্ষেপে লিপ্ত ছিল। অর্থাৎ, তারা মাত্র ৬% সময় শান্তিপূর্ণভাবে কাটিয়েছে।

কিন্তু কেন? কেন যুক্তরাষ্ট্র বারবার যুদ্ধ, গোপন অভ্যুত্থান এবং আন্তর্জাতিক সংকটে জড়িয়ে পড়ে? এটি কি নিছক ঐতিহাসিক ঘটনা, নাকি দেশটির অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ? ‘সিয়াটল টাইমস’-এর এক প্রতিবেদনে এই বিষয়টি বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ যুদ্ধ ইতিহাস

যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এটি মূলত চারটি ধাপে বিভক্ত:

  • আধিপত্যবাদী যুদ্ধ: মেক্সিকোর ভূখণ্ড দখল (১৮৪৬-১৮৪৮) এবং আমেরিকান আদিবাসীদের ওপর গণহত্যা (১৮১১-১৮৯০)।
  • বিশ্বযুদ্ধ: প্রথম বিশ্বযুদ্ধে (১৯১৭) এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৪৫) অংশগ্রহণ, যেখানে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
  • স্নায়ুযুদ্ধের যুগ: কোরিয়া ও ভিয়েতনামে সামরিক হস্তক্ষেপ, ১৯৫৩ সালে ইরানে অভ্যুত্থান।
  • একবিংশ শতাব্দীর যুদ্ধ: আফগানিস্তান ও ইরাক দখল, লিবিয়ায় সামরিক হামলা, ইয়েমেন ও সোমালিয়ায় ড্রোন হামলা, এবং সাম্প্রতিক ইউক্রেন যুদ্ধ।

এছাড়া, এই সময়কালে যুক্তরাষ্ট্র কম্বোডিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে।

কেন যুক্তরাষ্ট্র এত যুদ্ধ করে?

যুক্তরাষ্ট্র শুধু নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ করে না, বরং অর্থনৈতিক স্বার্থ, রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার এবং অস্ত্র বিক্রির লক্ষ্যে যুদ্ধ চালিয়ে যায়।

অস্ত্রশিল্প ও অর্থনৈতিক স্বার্থ

যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রশিল্প বৈশ্বিক অর্থনীতির অন্যতম প্রধান শক্তি। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ২৩৮ বিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বের মোট অস্ত্র বিক্রির ৫১%। এই খাত দেশটির অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি যুদ্ধপ্রবণ নীতিকে উসকে দেয়।

ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ ও সম্পদের নিয়ন্ত্রণ

মধ্যপ্রাচ্যের তেলক্ষেত্র, সামরিক বাজার এবং কৌশলগত জলপথের নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের অন্যতম মূল চালিকাশক্তি। বর্তমানে বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, যা তাদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়।

সাংস্কৃতিক আধিপত্য ও মূল্যবোধ চাপিয়ে দেওয়া

যুক্তরাষ্ট্র শুধু সামরিক দখলই করে না, বরং তাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারও এ বিষয়ে তার মন্তব্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ যুদ্ধ পরিকল্পনা?

যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধপ্রবণ নীতি অব্যাহত থাকার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হিসেবে সংযুক্ত করার হুমকি, পানামা খাল পুনর্দখলের পরিকল্পনা, এবং গ্রিনল্যান্ড কেনার জন্য বারবার প্রস্তাব দেওয়া- এসব বিষয় দেশটির সম্প্রসারণবাদী মানসিকতার পরিচয় বহন করে। যদিও এসব পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি, তবে এগুলো ভবিষ্যতের সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

উপসংহার: যুদ্ধই কি যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ?

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো যুদ্ধের ওপর নির্ভরশীল। অস্ত্রশিল্প, ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ এবং সাংস্কৃতিক আধিপত্য বজায় রাখার তাগিদ দেশটিকে বারবার সামরিক সংঘাতে ঠেলে দেয়। প্রশ্ন হলো, এই ধারা কি চিরকাল চলতে থাকবে, নাকি বিশ্ববাসী এই যুদ্ধপ্রবণ নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে? সময়ই এর উত্তর দেবে।