দেশে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য কেবল কি সংবিধানই দায়ী?

বাংলাদেশে বারবার কর্তৃত্ববাদী এবং স্বৈরশাসনের উত্থানের মূল কারণ চিহ্নিত করার জন্য একটি বিস্তারিত বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি সমস্যা সঠিকভাবে চিহ্নিত না করা হয়, তবে তার সমাধানও হবে না। গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর, ছাত্র নেতৃত্ব সংবিধান পুনর্লিখনের দাবি তুলছে এবং কেবল বর্তমান সংবিধানকেই দায়িত্বে অভ্যস্ত করছে। তারা নতুন সংবিধান তৈরির জন্য গণপরিষদ গঠনের দাবিও জানিয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং গণতন্ত্রের মূলনীতি অনুসরণ করে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বারবার এখানে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন উত্থিত হয়েছে, যার জন্য ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী সংবিধানে নানা পরিবর্তন এনে এর মূল চরিত্র বিকৃত করেছে। তবে প্রশ্ন উঠছে, কি কারণে বারবার স্বৈরশাসন ফিরে আসে? এর জন্য কেবল সংবিধান দায়ী না হয়ে, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিশ্লেষণ প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের অভাব, অগণতান্ত্রিক পদ্ধতির ব্যবহার, এবং ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি দেশের রাজনীতিতে দুর্নীতি এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ এবং গণতন্ত্রের চর্চা জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরিশীলিত রাজনীতি এবং জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার জন্য ‘পলিটিক্যাল পার্টি আইন’ প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এছাড়া, নির্বাচনে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উন্নয়ন ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। বর্তমান সংবিধান গণতান্ত্রিক, তবে এর কিছু পরিবর্তন এবং সংশোধন প্রয়োজন। ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল, প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রধান এক ব্যক্তি না হওয়ার আইন, এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনঃপ্রবর্তনসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা জনগণের স্বার্থে গ্রহণ করা উচিত।
বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শাসনের উত্থান শুধুমাত্র সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন এবং কাঠামোগত সংস্কারের পাশাপাশি গণতন্ত্রের চর্চা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন