যখন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি রাজনীতির এজেন্ডা হয়ে ওঠে

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পথে হাঁটছে না, এটি আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ২০ নভেম্বর, বুধবার। ওই দিন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে কোনো দল বা সংগঠনকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করে বিচারের আওতায় আনা যাবে না, যদিও প্রাথমিকভাবে ওই আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দলের বিচার করার প্রস্তাব ছিল। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মাটিতে অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত হয়েছিল।
অন্য দুটি আইনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও, আমি মনে করি, আইসিটি আইন থেকে দল বা সংগঠনের বিচারের বিষয়টি বাদ দিয়ে সরকার নভেম্বর মাসেই বার্তা দিয়েছে যে তারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পথে হাঁটছে না। প্রধান উপদেষ্টা কয়েক দিন আগে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করার ব্যাপারে সরকারের অবস্থান চূড়ান্তভাবে জানিয়ে দেন।
এই বক্তব্যের পরপরই দুটি ঘটনা ঘটে, যেগুলো পরিস্থিতিকে নতুন দিকে নিয়ে যায়। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, তাঁদের কিছু সদস্যকে ক্যান্টনমেন্টে একটি বৈঠকে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ তৈরি করে নির্বাচনে আনার কথা বলা হয়। হাসনাত স্পষ্টভাবে কারা ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন তা বলেননি, তবে পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বক্তব্যের ইঙ্গিত পরিষ্কার ছিল। হাসনাতের মতে, সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি আওয়ামী লীগকে নিয়ে নির্বাচন করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এই স্ট্যাটাসের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া একটি বক্তব্য শেয়ার করেন, যা পরে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হয়। আসিফ মাহমুদ অভিযোগ করেন, সেনাপ্রধান প্রধান উপদেষ্টা পদে ইউনূসকে পছন্দ করার ক্ষেত্রে তীব্রভাবে বিরোধিতা করেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত ‘বুকে পাথর চাপা দিয়ে’ সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন।
এ ঘটনাগুলো সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হতে থাকে, যার মাধ্যমে সেনাপ্রধানকে তাঁর পদ থেকে সরানোর প্রচেষ্টা বৃদ্ধি পায়। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে সেনাপ্রধানের কিছু বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তিনি নির্বাচনের সময়সীমা এবং ইনক্লুসিভ নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে সরকারের অস্থির পরিস্থিতিতে কিছু নিন্দা প্রকাশ করা সম্ভব হলেও, তার নেতৃত্বে সেনাবাহিনী এখনও স্থিতিশীল রয়েছে এবং নির্বাচনের সময় ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের মতামত রয়েছে, যা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। তবে সন্ত্রাস দমন আইন এবং ১৯৭৮ সালের রাজনৈতিক পার্টি আদেশ অনুযায়ী, সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক এবং ষড়যন্ত্রের খেলা চলতেই পারে, তবে নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পথ বন্ধ করতে এমন কোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার থাকা উচিত।
আপনার মতামত লিখুন