বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশি গুলিতে গুরুতর আহত মাঈন উদ্দিন সুস্থ, তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫, ২:৩২ অপরাহ্ণ
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশি গুলিতে গুরুতর আহত মাঈন উদ্দিন সুস্থ, তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার বাড়ৈআলগী গ্রামের মাঈন উদ্দিন (২৪), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘ চিকিৎসার পর জীবন-মৃত্যুর সংকট কাটিয়ে সুস্থ হয়েছেন। তবে তার ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে গভীর শঙ্কা রয়েছে।

মাঈন উদ্দিন একজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক। তার সংসার স্ত্রী ও চার বছরের কন্যাসন্তানসহ কোনো রকমে চলত। গত বছরের ১৯ জুলাই, শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন তিনি। আন্দোলনের সময় পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে তার ডান হাতে ও পেটে আঘাত লাগে, এবং গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চিকিৎসকদের মতে, গুলির আঘাতে মাঈন উদ্দিনের খাদ্যনালী ছিদ্র হয়ে যায় এবং জরুরি ভিত্তিতে তার পেটে রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি করা হয়। পরে কোলোস্টমি ব্যাগ স্থাপন করা হয়, যার মাধ্যমে তার মলত্যাগ চলত। দীর্ঘ চিকিৎসার পর ২৩ অক্টোবর পুনরায় সার্জারি করা হয় এবং কোলোস্টমি ব্যাগ অপসারণ করা হয়, ফলে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।

নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ এন এম মিজানুর রহমান জানান, মাঈন উদ্দিনের শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ছিল। তবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তিনি আরও বলেন, মাঈন উদ্দিন স্বাভাবিক নিয়মে মলত্যাগ করতে পারছেন, তবে তাকে আজীবন শারীরিক সীমাবদ্ধতার সঙ্গে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।

মাঈন উদ্দিনের পরিবার জানিয়েছে, চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে তারা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। চিকিৎসা খরচের সাহায্যে তাদের সমস্যা কিছুটা সমাধান হলেও, মাঈন উদ্দিনের কাজ করার সক্ষমতা এখন আগের মতো নেই। মাঈন উদ্দিন বলেন, “আমি কখনো ভাবিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব, কিন্তু এখন ভারী কাজ করতে পারব না। যদি সরকারের পক্ষ থেকে আমার জন্য কোনো চাকরি বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে পরিবার নিয়ে কোনোমতে বেঁচে থাকতে পারব।”

তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, “মাঈন উদ্দিন শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও তাকে সবসময় চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।” তিনি আরও বলেন, মাঈন উদ্দিনের মতো একজন তরুণকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য চিকিৎসক হিসেবে তারা গর্ব অনুভব করেন, তবে তার আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমাজের সকলের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। মাঈন উদ্দিনের জীবনসংগ্রাম কেবল তার ব্যক্তিগত কষ্টের গল্প নয়; এটি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগ ও লড়াইয়েরও গল্প।