চীনের সঙ্গে নতুন যুগের সম্পর্কে বাংলাদেশের অঙ্গীকার

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই সম্পর্ককে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি জানান, এটি কেবল রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের নয়, বরং জনগণের মধ্যে সম্প্রীতির সেতুবন্ধ তৈরির একটি বাস্তব পদক্ষেপ।
সোমবার (২১ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং ইউবোর সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে প্রফেসর ইউনূস বলেন, “এটা সবে শুরু। আমরা এত কাছাকাছি, তবু এত দূরে। আসুন, এটি পরিবর্তন করি।” তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ভালো প্রতিবেশী হতে চায়, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খুব ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হওয়া। তিনি তার সাম্প্রতিক চীন সফরের প্রসঙ্গ টেনে এনে এটিকে দুই দেশের সম্পর্কের জন্য একটি নতুন দিগন্ত বলে উল্লেখ করেন এবং চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের আন্তরিক বার্তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বৈঠকে গভর্নর ইউবো জানান, দক্ষিণ এশিয়ার উন্মুক্ত কেন্দ্র হিসেবে ইউনান প্রস্তুত এবং এই সফরের উদ্দেশ্যই হলো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করা। তিনি জানান, প্রফেসর ইউনূসের প্রবর্তিত ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা ইতোমধ্যে ইউনানের একটি চীনা ব্যাংক গ্রহণ করেছে, যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গভর্নর বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল ও ভাষা শিক্ষায় সহযোগিতা এবং সামুদ্রিক খাদ্য, আম ও কৃষি পণ্যের মতো খাতে বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রস্তাব দেন।
প্রধান উপদেষ্টা গভর্নরের সব প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য ও প্রশিক্ষণ— সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায় এবং এসব উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করবে। তিনি বিশেষভাবে চিকিৎসা পর্যটনের বিষয়ে চীনের সহযোগিতার প্রশংসা করেন এবং জানান, কুনমিংয়ে বাংলাদেশি রোগীদের জন্য চারটি নির্দিষ্ট হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে, যা এই অংশীদারত্বের একটি নতুন অধ্যায়।
শিক্ষা বিনিময়ের ক্ষেত্রেও দুই পক্ষ একমত হয়। বর্তমানে চীনে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে এবং প্রফেসর ইউনূস জানান, এই সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ তরুণদের উৎসাহ দেবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণরা যাতে চীনে গিয়ে পড়াশোনা ও ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, সেজন্য সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করবে।
বৈঠকের শেষে প্রধান উপদেষ্টা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে চীনের সঙ্গে অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সমৃদ্ধির নতুন সুযোগ তৈরি করতে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সচিব ও এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ।
আপনার মতামত লিখুন