কাশ্মীর হামলার পর ভারতে মুসলিমবিরোধী ঘৃণামূলক বক্তব্যের উদ্বেগজনক উল্লম্ফন: আইএইচএল-এর প্রতিবেদন

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: রবিবার, ৪ মে, ২০২৫, ৮:১৭ অপরাহ্ণ
কাশ্মীর হামলার পর ভারতে মুসলিমবিরোধী ঘৃণামূলক বক্তব্যের উদ্বেগজনক উল্লম্ফন: আইএইচএল-এর প্রতিবেদন

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর ২২ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত মাত্র ১১ দিনের ব্যবধানে ভারতজুড়ে ৬৪টি মুসলিমবিরোধী ঘৃণামূলক বক্তব্যের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে ইন্ডিয়া হেট ল্যাব (আইএইচএল)। তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এসব বক্তব্যের বেশিরভাগই মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও হরিয়ানার মতো রাজ্যগুলোতে সংগঠিত হয়েছে।

প্রতিবেদনটি এসব ঘটনার পেছনে অতি-ডানপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর নেতৃত্বে পরিচালিত একটি সমন্বিত দেশব্যাপী ঘৃণার প্রচারণার চিত্র তুলে ধরে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), বজরং দল, অন্তঃরাষ্ট্রীয় হিন্দু পরিষদ (এএইচপি), হিন্দু রাষ্ট্র সেনা, হিন্দু জনজাগৃতি সমিতিসহ একাধিক সংগঠন এসব ঘৃণাত্মক বক্তব্যে সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বক্তৃতাগুলোর মধ্যে মুসলিমদের ‘সবুজ সাপ’, ‘পোকামাকড়’ বা ‘পাগল কুকুর’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা প্রকাশ্য সমাবেশে বারবার বলা হয়েছে। বক্তারা মুসলিমদের সামাজিকভাবে বয়কটের আহ্বান জানান, সহিংসতা উস্কে দেন, এবং মুসলমানদের এলাকা থেকে তাড়ানোর হুমকি দেন। হিন্দুদের অস্ত্র ধারণের আহ্বানও জানান হয় এইসব সমাবেশে।

রাজ্যভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, মহারাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ১৭টি ঘৃণাবর্ষণমূলক বক্তব্য রেকর্ড হয়েছে। এরপর আছে উত্তর প্রদেশ (১৩টি), উত্তরাখণ্ড (৬টি), হরিয়ানা (৬টি), রাজস্থান (৫টি), মধ্যপ্রদেশ (৫টি), হিমাচল প্রদেশ (৫টি), বিহার (৪টি) এবং ছত্তিশগড় (২টি)।

এই বক্তব্যগুলোর প্রভাব শুধু মৌখিক পর্যায়েই থেমে থাকেনি। কাশ্মীরিদের লক্ষ্য করে সহিংস হামলার ঘটনাও বেড়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, হরিয়ানায় মুসলিম বিক্রেতা ও দোকানিদের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, কাশ্মীরি শাল বিক্রেতাদের ওপর আক্রমণ হয়েছে, উত্তরাখণ্ডে এক বিজেপি নেতার হুমকির খবর মিলেছে।

সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে উত্তর প্রদেশে, যেখানে এক মুসলিম ব্যক্তিকে কুড়াল দিয়ে নির্মমভাবে আঘাত করা হয় এবং হামলাকারী চিৎকার করে বলে, “ছাব্বিশ জন মারা গেছে, তোমাদের ছাব্বিশজনও মরবে।”

গবেষকদের মতে, এসব বক্তব্য ও ঘটনার একটি বড় অংশ ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব বা এক্স-এর মতো সামাজিক মাধ্যমে লাইভ-স্ট্রিম বা রেকর্ড করে পোস্ট করা হয়, ফলে সেগুলো লক্ষ লক্ষ দর্শকের কাছে দ্রুত পৌঁছে যায় এবং ঘৃণার আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ে।

এই প্রতিবেদন ভারতীয় সমাজে সাম্প্রতিক সময়ে ঘৃণার রাজনীতির প্রকট বাস্তবতা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংস মনোভাব বৃদ্ধির বিষয়টি গভীরভাবে তুলে ধরে।