মাগুরার নবগঙ্গাসহ সাত নদীর নাব্যতা হারিয়ে জলজ জীবন বিপন্ন

মাগুরার নবগঙ্গা নদীসহ জেলার আরও সাতটি নদী বর্তমানে নাব্যতা হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। একসময় এসব নদী ছিল কৃষি, মৎস্য ও পরিবেশগত ভারসাম্যের মূল ভিত্তি। কিন্তু এখন এগুলো পরিণত হয়েছে বদ্ধ জলাশয়ে। নদীর উজানে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, অব্যবস্থাপনা, দখলদারিত্ব ও দূষণের কারণে নদীগুলো স্বাভাবিক প্রবাহ হারিয়েছে। নাব্যতা না থাকায় নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে, শুকনো মৌসুমে নবগঙ্গায় পানি থাকে না। কৃষকরা নদীর বুক চাষাবাদের জন্য ব্যবহার করছেন, যা নদীর অস্তিত্ব সংকুচিত করছে এবং পরিবেশের ভারসাম্য ভেঙে পড়ছে। জলজ প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।
দখল ও দূষণের ছায়ায় নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে ইটভাটা, দোকানপাট, পাকা স্থাপনাসহ অবৈধ নির্মাণ। নবগঙ্গা নদী জেলার চারটি প্রধান নদীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দখলের শিকার হয়েছে, প্রায় ৫৫৮টি স্থানে অবৈধ দখল রয়েছে। শহরের ময়লা, ড্রেনের পানি ও কসাইখানার বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলার ফলে নদীর পানি অস্বাস্থ্যকর ও প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, যার আওতায় ১১ কিলোমিটার নদী খনন, ৮টি গোসলঘাট নির্মাণ ও রেগুলেটর সংস্কারের কথা ছিল। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থেকে গেছে, নদীর নাব্যতা ফিরে আসেনি, বরং অর্থের অপচয় হয়েছে।
আলোকদিয়ার ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, “কার্যকর পদক্ষেপ এখনই দরকার। নদী তীরবর্তী এলাকাবাসী ও পরিবেশ সচেতন নাগরিকরা বাস্তবসম্মত খনন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং নদীতে ময়লা ফেলা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ চান। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরলে কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনে উন্নতি হবে এবং পরিবেশও রক্ষা পাবে।”
পারনান্দয়ালী এলাকার বাসিন্দা গোলাম কবির বলেন, “শুধু প্রকল্প গ্রহণ করলেই হবে না, বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে টেকসই পদক্ষেপ না নিলে নবগঙ্গাসহ অন্যান্য নদীগুলো হারিয়ে যাবে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড, মাগুরার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান সুজন জানান, “২০১৭-১৮ অর্থবছরের পর থেকে নতুন কোনো প্রকল্প হয়নি। নদীর দুই পাড়ে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই অভিযান চালানো হবে।” তিনি আরও বলেন, “জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নদী রক্ষায় আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে, না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু পাঠ্যবইয়ে নবগঙ্গা নদীর নামই পড়বে।”
আপনার মতামত লিখুন