বিএনপি’র দাবি: ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন ও রোডম্যাপ ঘোষণার অনুরোধ

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫, ৫:২১ অপরাহ্ণ
বিএনপি’র দাবি: ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন ও রোডম্যাপ ঘোষণার অনুরোধ

বিএনপি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবি পুনর্বার জানিয়ে এক প্রকার হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দলের সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হবে। বৃহস্পতিবার (২২ মে) গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ হুঁশিয়ারি প্রদান করেন। এর আগে দলের স্থায়ী কমিটি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করে এবং বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, মানুষের গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ও মানবাধিকারসহ ভোটাধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তিনি দ্রুত এবং সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করে ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে জাতীয় সংসদ গঠন নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এজেন্ডা হওয়া উচিত জনগণের এই আকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া, অন্যথায় বিএনপি এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে পারবে না।

বিএনপির এ নেতা আরও জানান, পূর্বে দেওয়া প্রস্তাব ও পরামর্শ উপেক্ষিত হলে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবেন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, গত সাড়ে ৯ মাসে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা কতটুকু পূরণ হয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্যের মধ্যে ফাটল দেখা যাচ্ছে। এজন্য ঐক্য বজায় রেখে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন ছাড়া বিকল্প নেই।

সরকারের কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে নিরপেক্ষতার প্রতি জনমনে সংশয় সৃষ্টি হওয়ায় বিএনপি বিতর্কিত কিছু উপদেষ্টাকে সরানোর দাবি তুলেছে। বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বিতর্কিত বক্তব্য সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে বলে মন্তব্য করেন খন্দকার মোশাররফ। তিনি বলেন, ম্যান্ডেট সীমিত রেখে ছোট আকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাখাই ভালো, যাতে সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় থাকে।

বিএনপি মানবিক করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যাপারে সরকারের নীতির স্বচ্ছতা ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষার প্রশ্ন তুলেছে। দলের পক্ষ থেকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।

নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি বিরূপ মন্তব্য করে বলে, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়ে আলোচনা চলছে, কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি নিয়ে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করায় সরকার ও জনগণ বিব্রত হচ্ছে। তারা নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রশংসা করলেও ঢাকাসদর সিটি করপোরেশনের মেয়র নিয়োগ সংক্রান্ত বিতর্ককে অনৈতিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করারও নিন্দা করেছে।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, সরকারের করণীয় দেরি করলে তা সরকারের মর্যাদা ও সক্ষমতা ক্ষুণ্ন করে, একই প্রক্রিয়া অন্যদের দাবিকেও বৈধতা দেয়, যা সরকারের জন্য বিব্রতকর। তিনি নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব হিসেবে রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে ঘেরাও কার্যক্রমকে উদ্দেশ্যমূলক ও রহস্যজনক দাবি করেন।

শেষে তিনি উল্লেখ করেন, ফ্যাসিবাদী শক্তির বিচার কার্যক্রম চলমান থাকবে এবং সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।