যুক্তরাজ্যে সাবেক বাংলাদেশি শাসকগোষ্ঠীর ১৫০০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫, ১০:২২ অপরাহ্ণ
যুক্তরাজ্যে সাবেক বাংলাদেশি শাসকগোষ্ঠীর ১৫০০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ

লন্ডনে বাংলাদেশের সাবেক শাসকগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠদের মালিকানাধীন প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করেছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। শুক্রবার (২৩ মে) ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে বিষয়টি প্রকাশ করে।

জব্দ হওয়া এসব সম্পদের মালিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আহমেদ শায়ান রহমান ও আহমেদ শাহরিয়ার রহমানকে। তারা দুজনই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহকারী ও শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে ও ভাতিজা।

ব্রিটিশ আদালতের নির্দেশে এখন থেকে তারা এসব সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না। এর মধ্যে রয়েছে লন্ডনের অভিজাত গ্রোসভেনর স্কয়ারে অবস্থিত বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, যার প্রতিটির মূল্য কোটি কোটি পাউন্ড।

দ্য গার্ডিয়ান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের যৌথ তদন্তে জানা যায়, এসব সম্পদ ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, আইল অব ম্যান ও জার্সির মতো অফশোর জোনের কোম্পানির নামে কেনা হয়েছিল। তদন্তে ধরা পড়ে সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠদের নামে যুক্তরাজ্যে অন্তত ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদ রয়েছে, যার অংশ হিসেবে নয়টি সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে।

জব্দ হওয়া একটি সম্পত্তি লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেনসে, যেখানে একসময় শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা বসবাস করতেন বলে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে। এটির মূল্য প্রায় ৭.৭ মিলিয়ন পাউন্ড।

শেখ হাসিনার ভাগনি ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তিনি সম্প্রতি সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।

২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনকালে এসব সম্পদ গড়ে তোলা হয়। গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন এবং বর্তমানে ভারতে আশ্রয়ে রয়েছেন।

তার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়, যার নেতৃত্বে আছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি দুর্নীতি দমন, বিচারিক সংস্কার ও অর্থপাচার রোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।

বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, রহমান পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে তদন্ত চলছে।

এদিকে আহমেদ শায়ান রহমানের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তিনি কোনো অপরাধে জড়িত নন এবং যুক্তরাজ্যের তদন্তে সহযোগিতা করবেন। একইসঙ্গে তিনি অভিযোগগুলোকে বাংলাদেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করেন।

যুক্তরাজ্যের এনসিএ জানায়, এটি একটি চলমান বেসামরিক তদন্তের অংশ এবং আরও সম্পত্তি জব্দের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, এই অভিযান বিদেশি দুর্নীতিবাজদের জন্য একটি শক্ত বার্তা।